বাংলাদেশের ডিজিটাল ইতিহাসে একটি বড় ও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না। টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘদিনের বিতর্কিত ইন্টারনেট শাটডাউন ব্যবস্থার এখানেই কার্যত ইতি টানা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করার সুযোগ আইনিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং জরুরি সেবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই পোস্টে আমরা সহজ ভাষায় জানবো কেন আগে ইন্টারনেট বন্ধ করা হতো, নতুন আইনে কী পরিবর্তন এসেছে এবং ভবিষ্যতে ইন্টারনেট সচল রাখতে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে।
Content Summary
বাংলাদেশে ইন্টারনেট কেন বন্ধ করা হয়েছিল?
গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে মূলত
- রাজনৈতিক অস্থিরতা
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
- আন্দোলন বা নির্বাচনকালীন সময়
- গুজব ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে
তবে এসব সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জরুরি সেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশকে একাধিকবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
নতুন আইনে বাংলাদেশে আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না

নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো ধারা ৯৭।
এই ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,
ইন্টারনেট বা কোনো ধরনের টেলিযোগাযোগ সেবা কখনোই বন্ধ করা যাবে না।
এর ফলে এখন আর কোনো প্রশাসনিক আদেশ, জরুরি অবস্থা বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশব্যাপী বা আংশিকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হলো,
- নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকার
- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
- ডিজিটাল লেনদেন ও অনলাইন ব্যবসার নিরাপত্তা
- জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা
আরও পড়ুনঃ ভোটারদের জন্য সুখবর চালু হলো Smart Election Management BD App
কী পরিবর্তন এলো ইন্টারনেট সচল রাখার ক্ষেত্রে
নতুন আইনে কেবল ইন্টারনেট বন্ধ নিষিদ্ধই নয়, পুরো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আনা হয়েছে কাঠামোগত পরিবর্তন।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো হলো,
- মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির ক্ষমতার মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা
- সব লাইসেন্স মন্ত্রণালয়ের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকার প্রথা বাতিল
- বিটিআরসির স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
- লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা ও নির্দিষ্ট সময়সীমা
এর ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও পেশাদার ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হবে।
আরও পড়ুনঃ সিম বন্ধ করার নিয়ম ২০২৬: জিপি সহ সব অপারেটরের সম্পূর্ণ নির্দেশিকা
নতুন যেসব ব্যবস্থা যুক্ত করে সরকার
নতুন সংশোধিত আইনে যুক্ত হয়েছে একাধিক শক্তিশালী ও নাগরিকবান্ধব ব্যবস্থা,
- প্রতি ৪ মাসে বিটিআরসির গণশুনানি বাধ্যতামূলক
- সব সিদ্ধান্ত ও ফলোআপ বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ
- কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট রোধে আলাদা ধারা
- অযৌক্তিক জরিমানা হ্রাস
- লাইসেন্স আবেদনের সময় কমানো
এছাড়াও নাগরিক গোপনীয়তা রক্ষায় সিম ও ডিভাইস ডেটা অপব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
নজরদারি ও ইন্টারসেপশন: কড়া নিয়ন্ত্রণ
নতুন আইনে আইনানুগ নজরদারির ক্ষেত্রেও কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে।
ইন্টারসেপশন করা যাবে শুধুমাত্র,
- জাতীয় নিরাপত্তা
- আইনশৃঙ্খলা
- জরুরি প্রাণরক্ষা
- বিচারিক তদন্ত
এ ক্ষেত্রেও আধা-বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুনঃ স্মার্ট এনআইডি বিতরণ শুরু – স্ট্যাটাস চেক ও সংগ্রহের সম্পূর্ণ গাইড
FAQs – আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ হবে না বাংলাদেশে
হ্যাঁ, ধারা ৯৭ অনুযায়ী ইন্টারনেট বন্ধ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
না, আইন অনুযায়ী কোনো পরিস্থিতিতেই ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না।
২০২৫ সালের সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর থেকেই কার্যকর।
অনলাইন ব্যবসা, শিক্ষা, ফ্রিল্যান্সিং ও জরুরি সেবা বাধাহীন থাকবে।
হ্যাঁ, এটি জাতিসংঘ ও ITU নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
উপসংহার
বাংলাদেশে আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ হবে না, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি আইন নয়, এটি ডিজিটাল অধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার এক বড় অগ্রগতি।
ইন্টারনেট শাটডাউন নিষিদ্ধ, নজরদারিতে জবাবদিহিতা, বিটিআরসির স্বাধীনতা এবং নাগরিক গোপনীয়তা সুরক্ষা, সব মিলিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে এটি একটি যুগান্তকারী সংস্কার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে এগিয়ে যাওয়ার পথে এটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক।
আরও পড়ুনঃ BRTA DL Checker App কি? স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ট্যাটাস জানার সহজ উপায়
এছাড়াও টেক নিউজ আপডেট নিয়মিত আপনার মোবাইলে পেতে জয়েন করুন আমাদেরফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


