বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে কজন নারী নেতৃত্ব দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছেন, তাদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নন, বরং তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী জানার আগ্রহ নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে সবসময়ই ছিল।
বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী মূলত একটি সময়ের রাজনৈতিক উত্থান পতন, সংগ্রাম ও নেতৃত্বের ইতিহাস।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন সব ক্ষেত্রেই তার নাম জড়িয়ে আছে। ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবন মিলিয়ে তার পথচলা ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা।
এই লেখায় বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। জন্ম, পরিবার, শিক্ষা, দাম্পত্য জীবন, রাজনৈতিক উত্থান, প্রধানমন্ত্রীত্ব এবং মৃত্যুসংবাদ পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ দিক এখানে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
Content Summary
বেগম খালেদা জিয়া কে?
খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে রাজনীতিতে পরিচিত হলেও পরে নিজ যোগ্যতায় দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রীতে পরিণত হন।
তার নেতৃত্বে বিএনপি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অবস্থান করে।
গণতন্ত্র, নির্বাচন, বিরোধী রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তার ভূমিকা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলাদা গুরুত্ব বহন করে।
বেগম খালেদা জিয়া কবে জন্মগ্রহণ করেন?
খালেদা জিয়ার জন্ম সাল নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও বিভিন্ন দলিল ও জীবনী গ্রন্থ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট বলে উল্লেখ করা হয়।
কিছু নথিতে জন্ম সাল ১৯৪৬ বলা হলেও অধিকাংশ গবেষণায় ১৯৪৫ সালকেই গ্রহণ করা হয়েছে।
জন্মের সময়টি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অস্থির সময়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম নেওয়া এই শিশুই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবেন, তা তখন কেউ কল্পনাও করেনি।
বেগম খালেদা জিয়ার জন্মস্থান কোথায়
খালেদা জিয়ার জন্মস্থান ছিল তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ি জেলার নয়াবস্তি এলাকা। যদিও তার পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায়।
পরবর্তীতে পারিবারিক সূত্রে তার শিকড় বাংলাদেশেই বিস্তৃত হয়। ফেনীর ফুলগাজী এলাকাকে তিনি সবসময় নিজের আদিবাড়ি হিসেবে পরিচয় দিতেন।
আরও পড়ুনঃ স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেলে করণীয় কি?
বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা
খালেদা জিয়া তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা তৎকালীন কলকাতা ও ঢাকায় সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন বলে বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
শিক্ষাজীবন শেষ করেই তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হননি।
পারিবারিক জীবনেই তার মূল মনোযোগ ছিল, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক জীবনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিয়ে
খালেদা জিয়ার বিয়ে হয় ১৯৬০ সালে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। এই বিয়ের মাধ্যমেই তার জীবন নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করে।
স্বামী জিয়াউর রহমানের সামরিক ও রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় বিষয় ও রাজনীতির বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।
খালেদা জিয়ার স্বামীর নাম কি
খালেদা জিয়ার স্বামীর নাম ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।
সেই শোকই তাকে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পথে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ তারেক রহমানের জীবনী
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন

খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দেন ১৯৮২ সালে বিএনপিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং পরে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, নির্বাচন আদায়, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
খালেদা জিয়া কতবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং কবে
খালেদা জিয়া মোট তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রথমবার ১৯৯১ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদের জন্য এবং তৃতীয়বার ২০০১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বেই সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তার তৃতীয় মেয়াদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যু
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০২৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল প্রায় ৭৯ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বেগম খালেদা জিয়ার ছবি


আরও পড়ুনঃ জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে করণীয় কি?
FAQs
তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ছিলেন।
খালেদা জিয়ার দুই সন্তান ছিলেন তারেক রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো।
তিনি প্রথমবার ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
হ্যাঁ, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি সর্বশেষ বড় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন ২০১৭ সালে।
Conclusion
বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সংগ্রাম, নেতৃত্ব ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে তিনি কয়েক দশক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক ভারসাম্যে তার অবদান ভবিষ্যতেও আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।
বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী তাই শুধু একজন ব্যক্তির গল্প নয়, এটি একটি সময়ের ইতিহাস।
আরও পড়ুনঃ IoT Data SIM কি? বাংলাদেশে নতুন Data SIM দিয়ে কী কী করা যাবে
এছাড়াও টেক নিউজ আপডেট নিয়মিত আপনার মোবাইলে পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


