বিকাশ এখন শুধু মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাতেই সীমাবদ্ধ নয়, সেভিংস সুবিধার কারণে এটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকেই জানতে চান বিকাশ সেভিংস এর মুনাফার হার আসলে কত হয়, কীভাবে হিসাব করা হয়, কিংবা কোন কোন শর্তে এই হার বাড়ে বা কমে। যেহেতু এই হার নির্দিষ্ট নয় এবং পার্টনার ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে, তাই ব্যবহারকারীদের সব কিছু পরিষ্কারভাবে জানা জরুরি।
সাধারণভাবে দেখা যায়, বিকাশ অ্যাপে প্রদর্শিত মুনাফার হার বছরে ৮ থেকে ৯ শতাংশ বা কখনো আরও বেশি হতে পারে। হারটি নির্ভর করে জমার পরিমাণ, জমার সময়কাল (৬ মাস বা ১২ মাস), এবং কোন পার্টনার প্রতিষ্ঠান আপনি বেছে নিয়েছেন তার ওপর।
এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে বিকাশ সেভিংস এর মুনাফার হার, সাপ্তাহিক ও মাসিক ডিপিএস-এর সম্ভাব্য মুনাফা, টাকা তোলার নিয়ম, নিরাপত্তা এবং কীভাবে নতুন সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলবেন।
তথ্যগুলো সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে আপনি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
Content Summary
বিকাশ সেভিংস কি?
বিকাশ সেভিংস মূলত বিকাশ অ্যাপে থাকা একটি সঞ্চয় সুবিধা, যেখানে আপনি ছোট অঙ্ক থেকে নিয়মিত জমা শুরু করতে পারেন। এই সেভিংসের মাধ্যমেই সপ্তাহ বা মাস অনুযায়ী ডিপিএস খোলা যায়।
জমা করা অর্থ বিকাশ সরাসরি নিজের কাছে রাখে না, বরং নির্দিষ্ট পার্টনার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেই অর্থ স্থানান্তর করে। তারা যে মুনাফার হার ঘোষণা করে, আপনাকেও সেই হার অনুযায়ী মুনাফা দেওয়া হয়।
বিকাশ সেভিংসের সুবিধা হলো, পুরো প্রক্রিয়াটি অ্যাপ থেকে করা যায়, ন্যূনতম ডিপোজিট কম, এবং মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফা তুলনামূলক ভালো পাওয়া যায়।
যারা স্বল্প আয়ের মধ্যে নিয়মিত সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য এটি বেশ সুবিধাজনক।
বিকাশ সেভিংস এর মুনাফার হার কত? (bkash savings interest rate )
বিকাশ সেভিংস এর মুনাফার হার নির্দিষ্ট নয়। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে কোন পার্টনার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনি নির্বাচন করছেন তার ওপর। যেমন ব্র্যাক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ঢাকা ব্যাংক প্রভৃতি পার্টনার ব্যাংক তাদের নিজস্ব হার অনুযায়ী মুনাফা অফার করে।
সাধারণভাবে দেখা যায়, অ্যাপে প্রদর্শিত মুনাফার হার বছরে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ বা কখনো এর বেশি হতে পারে। এই হারকে বলা হয় p.a বা Per Annum, অর্থাৎ বছরে মোট যে মুনাফা দেওয়া হবে তার হিসাব। আপনার ডিপোজিটের পরিমাণ এবং ৬ বা ১২ মাসের মেয়াদ অনুযায়ী হার কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, আপনি চাইলে অ্যাপের সেভিংস অপশনে গিয়ে প্রতিটি পার্টনার ব্যাংকের বর্তমান মুনাফার হার সরাসরি দেখতে পারেন।
বিকাশে মাসে ১০০০ টাকা ডিপিএস করলে কত মুনাফা পাওয়া যাবে?

বিকাশে মাসে ১০০০ টাকা করে ডিপিএস করলে আপনি যে মুনাফা পাবেন তা নির্ভর করবে কোন পার্টনার ব্যাংক নির্বাচন করেছেন এবং সেই ব্যাংক বর্তমানে কত শতাংশ বার্ষিক হার দিচ্ছে তার ওপর।
সাধারণভাবে ধরা যায়, যদি মুনাফার হার ৮ থেকে ৯ শতাংশ p.a থাকে, তাহলে ১২ মাস শেষে আপনার জমা হবে ১২,০০০ টাকা এবং এর সাথে যুক্ত হবে কয়েকশ টাকা মুনাফা।
সঠিক পরিমাণটি পার্টনার ব্যাংক ভেদে ভিন্ন হয়, তাই বিকাশ অ্যাপে সেভিংস সেকশনে গিয়ে আপনার নির্বাচিত ব্যাংকের বর্তমান হার দেখে নিলে ঠিক কত মুনাফা পাবেন তা সহজেই জানতে পারবেন।
মাসে ১০০০ টাকা করে বিকাশ ডিপিএস করলে এক বছর শেষে মোট কত হতে পারে তার একটি ধারনা নিচে দিলাম।
- ধরা যাক পার্টনার ব্যাংকের বার্ষিক মুনাফার হার ৮.৭৫%।
- সে ক্ষেত্রে ১২ মাসে আপনার জমা হবে: ১২,০০০ টাকা
- রেকারিং ডিপোজিট হিসাব অনুযায়ী এক বছরে আনুমানিক মুনাফা পাওয়া যায় প্রায়: ৮০০–৮৭৫ টাকা।
- অর্থাৎ এক বছর পরে আপনার মোট অর্থ দাঁড়াতে পারে প্রায়: ১২,৮০০ থেকে ১২,৮৭৫ টাকা এর মতো।
এটি একটি গড় হিসাব। কোন পার্টনার ব্যাংক বেছে নিচ্ছেন এবং সেই সময়ের সঠিক হার কত, তার ওপর আসল মুনাফা কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
বিকাশ সাপ্তাহিক ডিপিএস এর মুনাফার হার
সাপ্তাহিক ডিপিএস এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আপনি প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেন। জমার পরিমাণ যত বেশি হবে, তত বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। সাপ্তাহিক ডিপিএস-এর মুনাফার হারও পার্টনার ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে।
অ্যাপে সাধারণত ৮ থেকে ৯ শতাংশ বার্ষিক হার প্রদর্শিত হয়, তবে এটি পরিবর্তনশীল এবং সময়ে সময়ে আপডেট হতে পারে।
যারা ধীরে ধীরে ছোট অঙ্কে সঞ্চয়ের অভ্যাস করতে চান, তাদের জন্য সাপ্তাহিক ডিপিএস একটি ভালো বিকল্প।
বিকাশ সেভিংস এর টাকা তোলার নিয়ম
বিকাশ সেভিংস বা ডিপিএস থেকে টাকা তোলা সহজ। মেয়াদ পূর্ণ হলে আপনার জমাকৃত অর্থ ও মুনাফা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিকাশ একাউন্টে চলে আসে।
মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেও টাকা তোলা সম্ভব, কিন্তু তখন আপনি ঘোষিত পূর্ণ মুনাফার হার পাবেন না। আগেই ভেঙে ফেললে পার্টনার ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কিছু চার্জ বা মুনাফার ক্ষতি হতে পারে।
টাকা তুলতে যা করতে হবে:
- বিকাশ অ্যাপ খুলুন
- সেভিংস মেনুতে যান
- সংশ্লিষ্ট ডিপিএস সিলেক্ট করে Close বা Withdraw নির্বাচন করুন
প্রক্রিয়াটি কয়েক সেকেন্ডেই সম্পন্ন হয়।
বিকাশ মাসিক ডিপিএস এর মুনাফার হার
মাসিক ডিপিএস সাপ্তাহিক ডিপিএস-এর মতোই, তবে জমা দেওয়ার সময়সীমা মাস ভিত্তিক। যারা মাসিক আয় অনুযায়ী সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক।
এখানেও মুনাফার হার সাধারণত ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ বা কিছু ক্ষেত্রে এর বেশি হতে পারে।
বড় অঙ্কে জমা করলে এবং ১২ মাসের মেয়াদ নিলে কিছু পার্টনার ব্যাংক তুলনামূলক বেশি মুনাফা দিয়ে থাকে। হার পরিবর্তনশীল হওয়ায় অ্যাপ থেকে সরাসরি দেখে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
বিকাশ সেভিংস কতটুকু নিরাপদ
বিকাশ সেভিংস নিরাপদ, কারণ আপনার জমা করা অর্থ সরাসরি পার্টনার ব্যাংকে রাখা হয়।
এই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মুনাফার হার ও সঞ্চয় সংক্রান্ত নীতিমালা সরকার অনুমোদিত।
বিকাশ কেবল আপনার সেভিংস একাউন্ট পরিচালনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।
ফলে অর্থ হারানোর ঝুঁকি নেই। তাছাড়া যেহেতু সবকিছু অ্যাপ থেকে দেখা যায়, তাই স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা খুব সহজ। আপনি চাইলে নিজেই বিকাশ অ্যাপ থেকে খুব সহজেই সেভিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
এছাড়া বিকাশ এজেন্টদের কাছ থেকে আপনি খুব সহজেই বিনামূল্যে বিকাশ সেভিংস চালু করতে পারেন।
নিজেই নিজের বিকাশ সেভিংস চালু করতে কয়েকটি ধাপে কাজটি শেষ করা যায়।
যা করতে হবে:
- বিকাশ অ্যাপ খুলুন
- সেভিংস অপশনে যান
- Weekly বা Monthly DPS নির্বাচন করুন
- আপনার পছন্দের পার্টনার ব্যাংক নির্বাচন করুন
- কত টাকা সঞ্চয় করতে চান সেটি নির্বাচন করুন
- রিকোয়েস্ট কনফার্ম করুন
সেভিংস চালু হয়ে যাবে এবং নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কিস্তি কেটে নেওয়া হবে।
FAQs – প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব
না, এটি পার্টনার ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে এবং সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়।
হ্যাঁ, তবে তখন মুনাফার হার কমে যেতে পারে বা কিছু চার্জ কাটা হতে পারে।
হ্যাঁ। সব অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত পার্টনার ব্যাংকে রাখা হয়, যা নিরাপদ।
আপনার আয়ের ধরন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ছোট অঙ্কে শুরু করতে চাইলে সাপ্তাহিক, আর স্থির আয়ের ক্ষেত্রে মাসিক ডিপিএস ভালো।
বিকাশ অ্যাপের সেভিংস সেকশনে প্রতিটি পার্টনারের বর্তমান হার দেখা যায়।
উপসংহার
বিকাশ সেভিংস এর মুনাফার হার ব্যবহারকারীর জন্য একটি বাস্তবসম্মত সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করে। বিভিন্ন পার্টনার ব্যাংকের দেওয়া হার থেকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করা যায়।
যেহেতু মুনাফার হার পরিবর্তনশীল, তাই অ্যাপ থেকে নিয়মিত আপডেট দেখা উচিত।
সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বিকাশ সেভিংস সহজেই আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো সঞ্চয় গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


