BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান অনেকেই। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (BTCL) এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক জিপন (GPON) প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চগতির ফাইবার ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।
এই প্রযুক্তি ঘরে ঘরে দ্রুত, স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে। অনেকেই জানতে চান BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেয়ার নিয়ম কী, এর খরচ কত, এবং কোন এলাকায় এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে—এই পোস্টে আমরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেব বিস্তারিতভাবে।
BTCL এর জিপন সেবা মূলত এমন গ্রাহকদের জন্য যারা টেলিফোন ও ইন্টারনেট একসাথে ব্যবহার করতে চান।
অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে এটি সেবা দেয়, ফলে সংযোগের মান স্থিতিশীল এবং ডাউনলোড স্পিডও অনেক বেশি। নিচে ধাপে ধাপে জেনে নিন বিটিসিএল জিপন সম্পর্কে সব তথ্য।
Content Summary
জিপন কি?
জিপন (GPON) এর পূর্ণরূপ হলো Gigabit Passive Optical Network। এটি একটি আধুনিক অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে একসাথে ফোন, ইন্টারনেট ও টিভি সেবা প্রদান করা যায়। প্রচলিত ব্রডব্যান্ড সংযোগের তুলনায় জিপন অনেক দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য।
এই প্রযুক্তিতে ফাইবার কেবল সরাসরি ব্যবহারকারীর বাসা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, ফলে নেটওয়ার্কে কম ব্যাঘাত ঘটে।
সাধারণ DSL বা কপার লাইন ব্যবহারের তুলনায় জিপনের ডেটা ট্রান্সফার ক্ষমতা অনেক বেশি, যা একে আধুনিক যুগের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অন্যতম সেরা সমাধান করে তুলেছে।
BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেয়ার নিয়ম
BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিতে চাইলে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন:
- MyBTCL অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন:
- গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে MyBTCL অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
- নতুন একাউন্ট খুলে “GPON Broadband Connection” অপশন নির্বাচন করুন।
- আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে আবেদন জমা দিন।
- টেলিসেবা পোর্টাল:
- আপনি চাইলে টেলিসেবা ওয়েবসাইট থেকেও আবেদন করতে পারেন। পুরনো সংযোগের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর।
- আপনি চাইলে টেলিসেবা ওয়েবসাইট থেকেও আবেদন করতে পারেন। পুরনো সংযোগের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর।
- সরাসরি অফিসে যোগাযোগ:
- নিকটস্থ BTCL অফিসে যোগাযোগ করে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে পারেন। কর্মকর্তারা আপনাকে ইনস্টলেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবেন।
আবেদনের পর BTCL টিম আপনার এলাকায় নেটওয়ার্ক সুবিধা যাচাই করে সংযোগ প্রদান করে। সাধারণত ৩–৫ কর্মদিবসের মধ্যে সংযোগ সম্পন্ন হয়।
বিটিসিএল জিপন ইন্টারনেট নিতে খরচ কত টাকা
BTCL জিপন ইন্টারনেটের খরচ নির্ভর করে আপনার নির্বাচিত প্যাকেজের ওপর। সাধারণত সংযোগ ফি এবং মাসিক প্যাকেজ ফি আলাদা করে নির্ধারণ করা হয়।
- সংযোগ ফি: প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
- মাসিক খরচ: সাধারণত প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে, যা প্যাকেজ স্পিড অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ১০ Mbps থেকে ৫০ Mbps পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজ পাওয়া যায়। BTCL চেষ্টা করছে যেন গ্রাহকরা কম খরচে বেশি স্পিড পান, তাই এটি অন্যান্য বেসরকারি ব্রডব্যান্ডের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
BTCL জিপন ইন্টারনেট প্যাকেজ তালিকা (২০২৫)

ছবিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী BTCL জিপন ইন্টারনেট প্যাকেজসমূহ নিচে বাংলায় দেওয়া হলো —
| ব্যান্ডউইথ প্যাকেজ | বর্তমান রেট (ইন্টারনেট অনলি) | আপগ্রেডেড/নতুন ব্যান্ডউইথ প্যাকেজ | নতুন রেট (ইন্টারনেট অনলি) |
|---|---|---|---|
| ৫ Mbps | ৫০০ টাকা | ৫ Mbps + ৫ Mbps | ৫০০ টাকা |
| ১০ Mbps | ৮০০ টাকা | ১০ Mbps + ৫ Mbps | ৮০০ টাকা |
| ১৫ Mbps | ১০৫০ টাকা | ২০ Mbps | ১০৫০ টাকা |
| ২০ Mbps | ১২৫০ টাকা | ২৫ Mbps | ১৩০০ টাকা |
| ২৫ Mbps | ১৪৫০ টাকা | ৩০ Mbps | ১৫০০ টাকা |
| ৩০ Mbps | ১৬৫০ টাকা | ৪০ Mbps | ২০০০ টাকা |
| ৪০ Mbps | ২০৫০ টাকা | ৫০ Mbps | ২৪০০ টাকা |
| ৫০ Mbps | ২৪৫০ টাকা | ৬০ Mbps | ২৮০০ টাকা |
| ৬০ Mbps | ২৮০০ টাকা | ৭৫ Mbps | ৩৩২৫ টাকা |
| ৭৫ Mbps | ৩৩২৫ টাকা | ৭৫ Mbps | ৩৩২৫ টাকা |
| ১০০ Mbps | ৪২০০ টাকা | ১০০ Mbps | ৪২০০ টাকা |
দ্রষ্টব্য: নতুন আপগ্রেডেড প্যাকেজে গ্রাহকরা আগের তুলনায় বেশি স্পিড পাবেন, অথচ অনেক ক্ষেত্রে রেট অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আপনি চাইলে MyBTCL অ্যাপ বা নিকটস্থ BTCL অফিসে যোগাযোগ করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্যাকেজ নির্বাচন করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ টিসিবি নতুন ৫ পণ্য বিক্রি শুরু করছে: জেনে নিন কোন এলাকায় ও কবে থেকে
জিপন কি ফ্রি রাউটার দেয়?
আমি খতিয়ে দেখেছি—বর্তমানে পাবলিকলি নিশ্চিত তথ্য নেই যে BTCL-এর জিপন (GPON) ব্রডব্যান্ড সংযোগের ক্ষেত্রে পূর্ণভাবে “ফ্রি রাউটার” দেওয়া হয়।
কিন্তু কিছু উৎসে দেখা যাচ্ছে ছোট বা প্রমোশনাল প্যাকেজে রাউটার ছাড় বা রাউটার সহ অফার দেওয়া হয়েছে বলে কথা রয়েছে। যেমন একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখা গেছে “399 Tk/মাস প্যাকেজ সহ ফ্রি WiFi রাউটার”।
তবে এটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট রাউটার ফ্রি অফার হিসেবে পুরোপুরি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
আপনার অঞ্চলে এই বিষয়টি সত্য কিনা, তা যাচাই করার জন্য সুপারিশ করছি:
- BTCL-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (যেমন btcl.portal.gov.bd) চেক করুন। (btcl.portal.gov.bd)
- আপনার এলাকার BTCL শাখা বা এজেন্সিতে যোগাযোগ করুন
- MyBTCL অ্যাপ বা হেল্পলাইন নম্বরে (১৬৪০২) ফোন করে জিজ্ঞাসা করুন
প্রয়োজনে আমি খুঁজে দেখতে পারি সংশ্লিষ্ট অফার-শর্ত সহ “রাউটার সহ প্যাকেজ” তথ্য। চান কি?
BTCL জিপন ইন্টারনেট স্পিড
BTCL এর জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স্পিড বেশ নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল। প্যাকেজ অনুযায়ী স্পিড সাধারণত ১০ Mbps থেকে ৫০ Mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখানে নেটওয়ার্কে বিঘ্ন বা ল্যাগ অনেক কম হয়। একই সঙ্গে BTCL গ্রাহকদের জন্য ডাউনলোড ও আপলোড স্পিডের ভারসাম্য বজায় রাখে, যা ভিডিও কনফারেন্স, স্ট্রিমিং এবং অনলাইন গেমিং-এর জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুনঃ মূল বেতন কত হলে আয়কর দিতে হবে | করের হার ও রিটার্ন গাইড
BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড সেবা কোন কোন এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে
বর্তমানে BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড সেবা বাংলাদেশের অনেক জেলা ও শহরে চালু হয়েছে।
এর মধ্যে প্রধান শহরগুলো হলো:
- ঢাকা মহানগর
- চট্টগ্রাম
- রাজশাহী
- খুলনা
- সিলেট
- ময়মনসিংহ
- বরিশাল
- কুমিল্লা
- সুনামগঞ্জসহ আরও কিছু জেলা শহর
BTCL তাদের MOTN (Mobile Optical Transmission Network) প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত সারাদেশে ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে।
আপনার এলাকায় সেবা পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে MyBTCL অ্যাপ বা ১৬৪০২ নম্বরে কল করে তথ্য জানতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ জিপি আনলিমিটেড ইন্টারনেট অফার ২০২৫
FAQs – প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব
না, BTCL নিজস্ব অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযোগ দেয়, তাই আলাদা টাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
সাধারণত ৩ থেকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সংযোগ সম্পন্ন হয়, এলাকাভেদে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।
MyBTCL অ্যাপ, বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে মাসিক বিল পরিশোধ করা যায়।
BTCL হেল্পলাইন ১৬৪০২ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
BTCL সারাদেশে MOTN প্রকল্পের মাধ্যমে ফাইবার লাইন স্থাপন করছে, যাতে গ্রাম পর্যায়েও জিপন সেবা পৌঁছে যায়।
উপসংহার
BTCL জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেয়ার নিয়ম জানা থাকলে আপনি সহজেই ঘরে বসে ফাইবার সংযোগ পেতে পারেন। MyBTCL অ্যাপ বা টেলিসেবা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন করা যায়, এবং কয়েক দিনের মধ্যেই সংযোগ স্থাপন সম্পন্ন হয়।
সাশ্রয়ী খরচ, উচ্চ গতি ও নির্ভরযোগ্য সংযোগ—এই তিন সুবিধার কারণে BTCL জিপন আজ দেশের বহু ব্যবহারকারীর পছন্দ।
আপনি যদি স্থিতিশীল ও সরকারি মানের ইন্টারনেট চান, তবে BTCL জিপন হতে পারে আপনার জন্য সেরা বিকল্প।
নিয়মিত টেক নিউজ আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন এবং জয়েন করুন ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


