বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সবচেয়ে বড় ঝামেলা হয় যখন ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়। চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় এখন আর থাকবে না—কারণ বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এমন একটি নতুন প্রযুক্তি, যা মোবাইল ফোনকে চার্জ ছাড়াই বছরের পর বছর চালাতে সক্ষম।
চীনের এক কোম্পানি এমন এক ব্যাটারি তৈরি করেছে, যা একবার চার্জ দিলে ৫০ বছর পর্যন্ত চলবে। এটি শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, এটি এখন বাস্তবের পথে।
Content Summary
- 1 পারমাণবিক ব্যাটারি মোবাইল প্রযুক্তি কী?
- 2 বেটাভোল্ট টেকনোলজির উদ্ভাবন
- 3 থার্মাল পাওয়ার টেকনোলজি: তাপ থেকেই চার্জ
- 4 চার্জবিহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তির সুবিধা
- 5 ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন আনবে এই প্রযুক্তি?
- 6 চার্জবিহীন মোবাইল প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ?
- 7 চার্জবিহীন ফোন কখন বাজারে আসবে?
- 8 ৫টি সাধারণ প্রশ্ন (FAQs)
- 9 উপসংহার
পারমাণবিক ব্যাটারি মোবাইল প্রযুক্তি কী?
চীনের বেটাভোল্ট টেকনোলজি নামের একটি স্টার্টআপ কোম্পানি এই উদ্ভাবনের মূল নায়ক। তারা এমন এক পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরি করেছে, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে তেজস্ক্রিয় উপাদান নিকেল-৬৩ (Nickel-63)।
এই উপাদান ক্ষয় হতে থাকলে শক্তি উৎপন্ন করে, এবং বিশেষ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা হয়। ফলে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয় না—বরং নিজেই শক্তি উৎপন্ন করে।
এই ব্যাটারির আকার খুব ছোট—মাত্র ১৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, এবং উচ্চতা ৫ মিলিমিটার। বেটাভোল্ট ২০২৫ সালের মধ্যেই এর শক্তি ১ ওয়াট পর্যন্ত বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে।
বেটাভোল্ট টেকনোলজির উদ্ভাবন
বেটাভোল্টের এই পারমাণবিক ব্যাটারি শুধু মোবাইলেই নয়, ভবিষ্যতে ড্রোন, স্মার্টওয়াচ, এমনকি মেডিকেল ডিভাইসেও ব্যবহার করা যাবে।
তারা দাবি করেছে, এই ব্যাটারি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব, কারণ এর তেজস্ক্রিয় উপাদান মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং এটি রিসাইকেল করাও সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ বাংলালিংক রাইজ অ্যাপ এখন আরও শক্তিশালী
থার্মাল পাওয়ার টেকনোলজি: তাপ থেকেই চার্জ
যুক্তরাজ্যের ইনোভেটিভ পাওয়ার সলিউশন্স (IPS) কোম্পানিও পিছিয়ে নেই। তারা এমন একটি থার্মাল পাওয়ার টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছে, যা পরিবেশের তাপমাত্রা থেকে শক্তি সংগ্রহ করে ব্যাটারিতে রূপান্তরিত করে।
এর ফলে ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো আশেপাশের তাপ ব্যবহার করে নিজেই চার্জ নিতে পারবে। যদিও এই প্রযুক্তি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, তবে এটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতের মোবাইল চার্জারহীন হবে।
চার্জবিহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তির সুবিধা
| সুবিধা | বিস্তারিত |
|---|---|
| দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ | একবার চার্জ দিলে ৫০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার সম্ভব |
| চার্জার দরকার নেই | বিদ্যুৎ ছাড়াই ব্যাটারি নিজেই শক্তি উৎপন্ন করে |
| পরিবেশবান্ধব | ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয় না |
| নিরাপদ ও স্থিতিশীল | তেজস্ক্রিয় উপাদান মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ |
| দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার | স্মার্টফোন, ওয়াচ, ড্রোনসহ বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য |
ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন আনবে এই প্রযুক্তি?
চার্জবিহীন মোবাইল ফোন আসলে প্রযুক্তি জগতের বিপ্লব। একদিকে চার্জ নিয়ে ঝামেলা থাকবে না, অন্যদিকে টেলিকম খাতেও পরিবর্তন আসবে, কারণ দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি মানে দীর্ঘ সময় ব্যবহার এবং বেশি সংযোগ।
ভবিষ্যতে ফোনের ব্যাটারি বদলানোর দরকার হবে না, যা ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমাবে এবং পরিবেশ রক্ষা করবে।
চার্জবিহীন মোবাইল প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ব্যাটারিতে ব্যবহৃত নিকেল-৬৩ উপাদানটি অত্যন্ত স্থিতিশীল। এটি কোনোভাবে বিস্ফোরিত হয় না বা লিক করে না, ফলে নিরাপদভাবে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায়।
তবে এখনো এটি সম্পূর্ণরূপে বাজারে আসেনি। ২০২৬ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চার্জবিহীন ফোন কখন বাজারে আসবে?
বেটাভোল্ট জানিয়েছে, তাদের ব্যাটারির উন্নত সংস্করণ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ পরীক্ষার পর্যায় পেরোবে।
এরপর ২০২৬ সাল থেকে সীমিত পরিসরে মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার শুরু হতে পারে। অন্যদিকে, IPS এর থার্মাল টেকনোলজি এখনো প্রাথমিক পরীক্ষায় আছে, তবে পরবর্তী ৩–৫ বছরের মধ্যে বাজারে আসার আশা করা হচ্ছে।
৫টি সাধারণ প্রশ্ন (FAQs)
১. পারমাণবিক ব্যাটারি কীভাবে কাজ করে?
নিকেল-৬৩ ক্ষয় হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে, যা ইলেকট্রিক পাওয়ারে রূপান্তরিত হয়।
২. এটি কি মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
না, এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং রেডিয়েশন মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
৩. কবে থেকে চার্জবিহীন ফোন পাওয়া যাবে?
সম্ভবত ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রথম কমার্শিয়াল সংস্করণ বাজারে আসবে।
৪. এই ব্যাটারি কি পুনরায় চার্জ দিতে হয়?
না, এটি নিজেই শক্তি উৎপন্ন করে, ফলে আলাদা চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫. এটি কি সব ধরনের ফোনে ব্যবহার করা যাবে?
প্রথমে নির্দিষ্ট মডেলগুলোতে ব্যবহার করা হবে, পরে ধীরে ধীরে সব ডিভাইসে প্রয়োগ সম্ভব।
উপসংহার
চার্জবিহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ভবিষ্যতের এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি শুধু ব্যবহারকারীর জীবন সহজ করবে না, বরং প্রযুক্তি ও পরিবেশ উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যদিও এখনো এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, তবে একবার বাজারে এলে “চার্জ শেষ” কথাটি অতীত হয়ে যাবে।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


