বর্তমানে মোবাইল সিম কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ব্যাংকিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, সোশ্যাল মিডিয়া সবকিছুর জন্যই সিম অপরিহার্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকায় নানা ধরনের অপব্যবহার, প্রতারণা ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার ও বিটিআরসি নতুন করে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনেকের মধ্যেই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, একটি এনআইডিতে কতটি সিম কার্ড থাকবে, ১ জানুয়ারি থেকে কোন কোন সিম বন্ধ হবে এবং এই সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের আসল কারণ কী। বিশেষ করে যাদের নামে একাধিক সিম রয়েছে, তাদের জন্য বিষয়টি জানা খুবই জরুরি।
এই পোস্টে আমরা সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করবো একটি এনআইডিতে কতটি সিম কার্ড থাকবে, নতুন নিয়ম কী, কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ গ্রাহকদের কী করণীয়।
Content Summary
১ জানুয়ারি থেকে বন্ধ হচ্ছে যেসব সিম কার্ড
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত সিম কার্ড ধাপে ধাপে বন্ধ করা হবে। বর্তমানে যাদের নামে ছয়টির বেশি সক্রিয় সিম রয়েছে, সেগুলো আর আগের মতো বৈধ থাকবে না। বিটিআরসি আগেই তিন মাস সময় দিয়ে অতিরিক্ত সিম বাতিল বা মালিকানা পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিল।
যেসব গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজের নামে থাকা অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্ট্রেশন করেননি, তাদের সিম মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এই সিদ্ধান্ত মূলত অবৈধ সিম ব্যবহার, বায়োমেট্রিক অপব্যবহার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমানোর জন্য নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে রাস্তাঘাটে বা ভাসমান দোকান থেকে কেনা সিমের ক্ষেত্রে গ্রাহকের অজান্তে বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এসব ঝুঁকি কমাতেই ১ জানুয়ারি থেকে এই কঠোর ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে।
১ জানুয়ারি পর কতটি সিম কার্ড থাকবে একটি এনআইডিতে
নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে একটি এনআইডির বিপরীতে সর্বোচ্চ পাঁচটি সিম কার্ড রাখা যাবে। এর বেশি নতুন সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে না।
বর্তমানে যাদের নামে ছয় থেকে দশটি সিম রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও ধাপে ধাপে সংখ্যা কমিয়ে পাঁচে নামিয়ে আনা হবে।
অর্থাৎ
- একজন গ্রাহক নতুন করে সর্বোচ্চ পাঁচটি সিম নিবন্ধন করতে পারবেন
- পাঁচটির বেশি সিম থাকলে অতিরিক্ত সিম বাতিল করতে হবে
- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে অপারেটর নিজ উদ্যোগে সিম বন্ধ করবে
এই সিদ্ধান্ত সব মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক সবাই এই নীতিমালার আওতায় থাকবে।
আরও পড়ুনঃ উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টন নতুন নিয়ম | কী বদলালো ও কেন বদলালো
কেন সিমের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নিল সরকার
সরকার ও বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো জাতীয় নিরাপত্তা ও গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
তদন্তে দেখা গেছে, একটি এনআইডিতে অস্বাভাবিক সংখ্যক সিম থাকার কারণে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি একদিনেই একাধিক সিম কিনছেন, যা স্বাভাবিক নয়।
আবার কিছু অসাধু বিক্রেতা গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করে পরে সেই তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে সিম নিবন্ধন করছে।
এসব সিম ব্যবহার করে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এই সিদ্ধান্তের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সরকার মনে করছে, একটি এনআইডিতে সীমিত সংখ্যক সিম থাকলে অপরাধ ট্র্যাক করা সহজ হবে এবং সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি কমবে।
একটি এনআইডিতে কতটি সিম কার্ড থাকবে নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা
অনেকে মনে করছেন, পুরনো সিমগুলোও একেবারে বাতিল হয়ে যাবে। বাস্তবে বিষয়টি তা নয়।
যেসব গ্রাহকের নামে পাঁচটির বেশি সিম রয়েছে, তারা চাইলে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঁচটি রেখে বাকি সিম বাতিল বা অন্যের নামে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
আরেকটি ভুল ধারণা হলো, এই নিয়ম শুধু নতুন সিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাস্তবে এটি পুরনো ও নতুন উভয় সিমের ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে।
আরও পড়ুনঃ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে করার উপায় মোবাইল থেকে
FAQs –
১ জানুয়ারি থেকে একটি এনআইডির বিপরীতে সর্বোচ্চ পাঁচটি সিম কার্ড রাখা যাবে।
আপনাকে অতিরিক্ত সিম বাতিল বা মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না করলে অপারেটর সিম বন্ধ করে দেবে।
না, আপনি যদি নিজে থেকে অতিরিক্ত সিম বাতিল করেন বা সংখ্যা পাঁচে নামিয়ে আনেন, তাহলে সমস্যা হবে না।
না, ১ জানুয়ারির পর নতুন করে পাঁচটির বেশি সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে না।
অবৈধ সিম ব্যবহার, বায়োমেট্রিক অপব্যবহার, প্রতারণা ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি কমানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
একটি এনআইডিতে কতটি সিম কার্ড থাকবে, এই প্রশ্নটি এখন দেশের প্রায় সব মোবাইল ব্যবহারকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচটি সিম রাখার সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের জন্য কিছুটা কঠোর মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।
আপনার নামে যদি এখনো অতিরিক্ত সিম থেকে থাকে, তাহলে দেরি না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এতে ভবিষ্যতে হঠাৎ করে সিম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে এবং আপনি আইনগতভাবেও নিরাপদ থাকবেন।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে টিসিবি ডিলার আবেদন করার নিয়ম | ৩৬ জেলায় ডিলার নেয়া হচ্ছে
এছাড়াও টেক নিউজ আপডেট নিয়মিত আপনার মোবাইলে পেতে জয়েন করুন আমাদেরফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


