দীর্ঘদিন ধরে জিমেইল ব্যবহারকারীদের একটি বড় অভিযোগ ছিল, একবার জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুললে সেই ইমেইল ঠিকানা আর কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যেত না। নামের বানান ভুল, অপ্রফেশনাল ইউজারনেম বা সময়ের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া ঠিকানা নিয়ে ব্যবহারকারীদের বছরের পর বছর চলতে হতো।
তাই বাধ্য হয়ে অনেকে নতুন জিমেইল খুলতেন, যার ফলে পুরনো ইমেইল, ফাইল, কনট্যাক্ট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লগইন হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতো।
এই দীর্ঘদিনের সমস্যার অবসান ঘটাতে যাচ্ছে গুগল। সম্প্রতি প্রকাশিত গুগলের সাপোর্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী, জিমেইল এড্রেস পরিবর্তন করার নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফিচারটি চালু হলে এটি জিমেইলের ইতিহাসে অন্যতম বড় ও ব্যবহারকারী-বান্ধব আপডেট হিসেবে বিবেচিত হবে।
জিমেইল এড্রেস পরিবর্তন করবেন কিভাবে? (জিমেইল এড্রেস পরিবর্তন করার নিয়ম)
এখনো পর্যন্ত গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে ধাপে ধাপে নির্দেশনা প্রকাশ করেনি। তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই অপশনটি গুগল অ্যাকাউন্টের সেটিংসের মধ্যেই যুক্ত হতে পারে।
সম্ভাব্যভাবে ব্যবহারকারী তার বর্তমান জিমেইল অ্যাকাউন্টে ঢুকে একটি নতুন ইমেইল ঠিকানাকে প্রাইমারি হিসেবে সেট করতে পারবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরনো জিমেইল ঠিকানাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে না। সেটি এলিয়াস হিসেবে থেকে যাবে এবং পুরনো ঠিকানায় আসা সব ইমেইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ঠিকানায় ফরওয়ার্ড হবে।
এর ফলে আলাদা করে প্রতিটি ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল আপডেট করার ঝামেলা অনেকটাই কমে যাবে।
গুগল কেন এখন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?

বর্তমানে গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফোন নম্বর, রিকভারি ইমেইল, প্রোফাইল নাম এমনকি ইউজারনেমও আংশিকভাবে কাস্টমাইজ করা যায়।
কিন্তু মূল জিমেইল ঠিকানাটি এতদিন অপরিবর্তনীয় ছিল।
গুগল এখন ব্যবহারকারীদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ দিতে চায়। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হওয়ায়, ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কমেছে।
এসব কারণেই গুগল এখন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিমেইল ঠিকানা এতদিন পরিবর্তন করা যেত না কেন?
জিমেইল চালুর শুরু থেকেই গুগল ইমেইল ঠিকানাকে শুধু একটি মেইল আইডি হিসেবে নয়, বরং একটি ডিজিটাল পরিচয় হিসেবে বিবেচনা করেছে।
এই একটিমাত্র ঠিকানার সঙ্গে যুক্ত থাকে গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, গুগল ফটোস, প্লে স্টোর, ব্যাংকিং সেবা এবং অসংখ্য থার্ড-পার্টি ওয়েবসাইট।
একবার ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ দিলে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, পরিচয় যাচাই জটিলতা এবং ডেটা নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল।
সেই কারণেই এতদিন গুগল এই সুবিধা দেয়নি।
আরও পড়ুনঃ স্টারলিংক ইন্টারনেট দাম কত টাকা?
এই সুবিধা কারা পাবেন?
গুগল সাধারণত নতুন ফিচার একসঙ্গে সবার জন্য চালু করে না।
ধারণা করা হচ্ছে,
- শুরুতে সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিগত জিমেইল ব্যবহারকারী
- এরপর ধাপে ধাপে সাধারণ ব্যবহারকারীরা
- পরবর্তীতে গুগল ওয়ার্কস্পেস বা বিজনেস অ্যাকাউন্ট
বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে কবে এটি পুরোপুরি চালু হবে, সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট সময়সূচি জানানো হয়নি।
জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনে ব্যবহারকারীদের কী সুবিধা হবে?
এই ফিচার চালু হলে ব্যবহারকারীরা তাদের ডিজিটাল পরিচয় নতুনভাবে সাজাতে পারবেন।
পেশাগত কাজে আরও ক্লিন ও প্রফেশনাল ইমেইল ব্যবহার করা সম্ভব হবে, তাও আবার নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ঝামেলা ছাড়াই।
যারা দীর্ঘদিন ধরে স্প্যাম, ফিশিং বা অপ্রয়োজনীয় মেইলের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নতুন ঠিকানা ব্যবহার করে সেই চাপ কমাতে পারবেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, পুরনো অ্যাকাউন্টের সব ডেটা, ফাইল, সাবস্ক্রিপশন ও লগইন অক্ষত থাকবে।
আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট স্পিডের নতুন যুগে বাংলাদেশে
সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা ও সতর্কতা
এই ফিচারে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
যেমন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতবার ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে, তার ওপর সীমা থাকতে পারে। জনপ্রিয় বা আগে থেকেই ব্যবহৃত ইউজারনেম পাওয়া নাও যেতে পারে।
নিরাপত্তার জন্য গুগল টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন, ফোন নম্বর ও রিকভারি ইমেইল আপডেট বাধ্যতামূলক করতে পারে।
বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
বাংলাদেশে শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা ও কর্পোরেট কর্মীদের বড় একটি অংশ জিমেইলের ওপর নির্ভরশীল।
অনেকেই এখনো পুরনো বা অপ্রফেশনাল ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করছেন শুধুমাত্র ডেটা হারানোর ভয়ে।
এই নতুন সুবিধা চালু হলে ব্যাংকিং, সরকারি পোর্টাল, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে বড় স্বস্তি আসবে।
আরও পড়ুনঃ সরকারি ছুটির তালিকা ২০২৬
FAQs: জিমেইল এড্রেস পরিবর্তন করার নিয়ম
গুগলের সাপোর্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী, এই সুবিধা আনার প্রস্তুতি চলছে।
পুরনো ঠিকানাটি এলিয়াস হিসেবে থাকবে এবং মেইল নতুন ঠিকানায় ফরওয়ার্ড হবে।
না, ধাপে ধাপে ব্যবহারকারীদের জন্য চালু হতে পারে।
সম্ভাবনা আছে, তবে প্রথমে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে আসতে পারে।
না, গুগল বাড়তি নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমেই ফিচারটি চালু করবে।
উপসংহার
সব মিলিয়ে, জিমেইল এড্রেস পরিবর্তন করার নিয়ম চালু হওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর।
এটি শুধু একটি সেটিংস আপডেট নয়, বরং ডিজিটাল পরিচয়ের ওপর ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আগামী দিনে জিমেইলে আরও স্মার্ট এলিয়াস ম্যানেজমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন ফিচার যুক্ত হতে পারে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে এই সুবিধার অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।
আরও পড়ুনঃ আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ হবে না বাংলাদেশে
এছাড়াও টেক নিউজ আপডেট নিয়মিত আপনার মোবাইলে পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


