জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে, এটি অনেকের সাধারণ প্রশ্ন। সনদে নাম, জন্মতারিখ বা অন্যান্য তথ্য ভুল থাকলে ভবিষ্যতে নানা কাজে সমস্যায় পড়তে হয়। স্কুল ভর্তি, পাসপোর্ট, চাকরি, ব্যাংকিং, এমনকি উত্তরাধিকার নির্ধারণে জন্ম নিবন্ধনের সঠিক তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভুল তথ্য ঠিক করা জরুরি।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে, তা জানা থাকলে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ হয়। অনলাইনে আবেদন করা, কাগজপত্র আপলোড করা, ফি জমা দেওয়া—সবকিছু নির্দিষ্ট নিয়মে করতে হয়।
অনেকেই জানেন না কোন ওয়েবসাইটে যেতে হবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে অথবা কোন কোন কাগজপত্র স্ক্যান করে দিতে হয়। এর ফলেই আবেদন বাতিল বা দেরি হয়ে যায়।
আজকের গাইডে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি কত, কতদিন লাগে—সব কিছু পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
একবার পড়ে নিলে আপনি সহজেই নিজে আবেদন করতে পারবেন বা অন্যকে সহায়তা করতে পারবেন।
Content Summary
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম এখন অনেক সহজ। অনলাইন সাইটে প্রবেশ করে আবেদন করা যায়, আবার চাইলে স্থানীয় নিবন্ধক অফিসেও সরাসরি আবেদন জমা দেওয়া যায়।
অনলাইনে আবেদন করলে আগে ফর্ম পূরণ করতে হয়, প্রমাণপত্র আপলোড করতে হয়, তারপর আবেদনপত্র প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হয়।
তথ্য যাচাইয়ের জন্য অফিসে সরাসরি কাগজপত্র দেখাতে হয়। ভুল তথ্য যদি পিতা বা মায়ের নাম সম্পর্কিত হয়, তবে তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে সংশোধন করতে হয়।
তাদের নিবন্ধন নম্বর না থাকলে নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র দিয়ে নাম সংশোধন করা যায়। অনুমোদনের পর নতুন সনদ ডাউনলোড করে নেওয়া যায়।
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন
জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ঠিক করতে হলে অনলাইন আবেদন করতে হয়।
এজন্য https://bdris.gov.bd/br/correction এ গিয়ে সংশোধনের আবেদন জমা দিতে হয়।
পিতা বা মাতার নাম ঠিক করতে চাইলে কয়েকটি বিষয় আগে বুঝে নেওয়া দরকার।
যদি পিতা বা মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর থাকে, তাহলে প্রথমে তাদের নিজ নিজ জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করতে হবে।
এরপর আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদে যদি তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে তারা নাম ঠিক করার পর আপনার সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে নতুন নামটি দেখা যাবে।
কিন্তু আপনার সনদ তৈরি করার সময় যদি পিতা বা মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর যোগ করা না হয়ে থাকে, তাহলে প্রথমে তাদের নম্বর আপনার জন্ম নিবন্ধনের সাথে যুক্ত করতে হবে। নম্বর যুক্ত করার পর সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে সেখানে সংশোধিত নাম প্রদর্শিত হবে।
যদি পিতা বা মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে এবং আপনার জন্ম তারিখ ১.১.২০০১ সালের আগে হয়, তাহলে নিজের জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের সময় সরাসরি পিতা বা মাতার নাম ঠিক করার সুযোগ থাকে। এ ক্ষেত্রে পিতা বা মাতা মৃত হলেও তাদের কোনো প্রমাণপত্র দিতে হবে না।
যদি পিতা বা মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে এবং তারা মৃত থাকেন এবং আপনার জন্ম তারিখ ১.১.২০০১ সালের পরে হয়, তাহলে নিজের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার সময় পিতা বা মাতার নাম ঠিক করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর প্রমাণপত্র দিতে হবে।
সংশোধন আবেদন জমা দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণপত্র অনলাইনে আপলোড করতে হয়।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে তা আবেদনকারীর ভুল তথ্যের ধরন অনুযায়ী নির্ভর করে।
সাধারণত জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপি, পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত সনদ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রমাণপত্র দিতে হয়। নাম, জন্মতারিখ বা ঠিকানা সংশোধনের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কাগজপত্র প্রয়োজন।
যদি জন্মতারিখ ভুল থাকে তবে হাসপাতালের কাগজ, ভ্যাকসিন কার্ড বা অ্যাফিডেভিট লাগতে পারে। ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ বিল বা ভোটার আইডি।
পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে হলে তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর যুক্ত করতে হয়, আর তারা মৃত হলে মৃত্যুর প্রমাণপত্র দিতে হয়।
কোন ওয়েবসাইটে যেতে হবে
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করতে হয় সরকারি ওয়েবসাইট bdris.gov.bd/br/correction–এ।
এই সাইটে প্রবেশ করে সংশোধনের ধরন নির্বাচন, আবেদন ফর্ম পূরণ, কাগজপত্র আপলোড এবং ফি জমা দেওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায়। সাইটটি সব ডিভাইস থেকে সহজে ব্যবহারযোগ্য।
সাইটে আবেদন সাবমিট করার পর আবেদনপত্র প্রিন্ট করে রাখতে হয়। পরে এটি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড অফিস বা ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হয় যাচাইয়ের জন্য।
অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করার সুবিধাও রয়েছে, তাই আবেদন অনুমোদন হলেই নতুন সনদ ডাউনলোড করা যায়।
আরও পড়ুনঃ নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
স্ক্যান করে যে সকল কাগজপত্র আপলোড করতে হবে
স্ক্যান করে আপলোড করতে হয় মূল জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি। এছাড়া পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের স্ক্যান কপি প্রয়োজন হয়।
যদি শিক্ষাগত সনদ থাকে তবে এসএসসি বা এইচএসসি সনদ আপলোড করা যায়, এটি তথ্য যাচাইয়ে সাহায্য করে।
জন্মতারিখ সংশোধনে হাসপাতালের কাগজ, ভ্যাকসিন কার্ড বা আদালত প্রদত্ত অ্যাফিডেভিট দিতে হয়।
ঠিকানা সংশোধনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল বা ভোটার কার্ড স্ক্যান করে দিতে হয়।
পিতা-মাতা মৃত হলে মৃত্যুর সনদ আপলোড করতে হয়। সব কাগজপত্র স্পষ্টভাবে স্ক্যান করা জরুরি।
আরও পড়ুনঃ কেন লোগো পরিবর্তন করল বাংলালিংক: নতুন ব্র্যান্ড লুকের আসল কারণ
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি কত টাকা
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি সাধারণত ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ফি পরিবর্তন হয়।
নাম, জন্মতারিখ বা পিতামাতার নাম সংশোধনের জন্য আলাদা চার্জ হতে পারে। সরকারি নির্ধারিত ফি অনলাইনে বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়া যায়।
আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রাপ্ত রসিদের কপি সংরক্ষণ করে রাখতে হয়।
এটি স্থানীয় নিবন্ধক অফিসে যাচাইয়ের সময় প্রয়োজন হয়। ফি জমা না দিলে আবেদন প্রক্রিয়া অগ্রসর হয় না, তাই শুরুতেই ফি জমা দেওয়াই ভালো।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত দিন সময় লাগে
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে সাধারণত সাত থেকে পনেরো দিন সময় লাগে। তবে সংশোধনের ধরন এবং অফিসের কাজের চাপ অনুযায়ী সময় কিছুটা বাড়তে পারে।
অনলাইন আবেদন করলে স্ট্যাটাস দেখা যায়, তাই অনুমোদন কখন হবে তা সহজেই জানা যায়।
যদি তথ্য যাচাইয়ে অতিরিক্ত প্রমাণপত্র প্রয়োজন হয়, তবে প্রক্রিয়াটি আরও সময় নিতে পারে। সঠিক কাগজপত্র দিলে দ্রুত অনুমোদন পাওয়া যায়।
সাধারণত বড় শহরের অফিসে প্রক্রিয়া তুলনামূলক দ্রুত সম্পন্ন হয়।
FAQs –
অনলাইনে bdris.gov.bd/br/correction এ গিয়ে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করে আবেদনপত্র স্থানীয় অফিসে জমা দিলে যাচাই শেষে নতুন সনদ পাওয়া যায়।
হাসপাতালের কাগজ, ভ্যাকসিন কার্ড, বা অ্যাফিডেভিট সাধারণত প্রয়োজন হয়। এছাড়া পূর্বের শিক্ষাগত সনদ থাকলে তা দেওয়াও সুবিধা হয়।
তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর যুক্ত করতে হয়। যদি না থাকে, তবে প্রমাণপত্র দিয়ে নাম সংশোধন করা যায়। মৃত হলে মৃত্যুর সনদ দিতে হয়।
এটি বাধ্যতামূলক নয়। অনলাইনে আবেদন করা গেলে সুবিধা বেশি। চাইলে সরাসরি স্থানীয় নিবন্ধক অফিসেও আবেদন করা যায়।
অনুমোদন হলে অনলাইনে সনদ ডাউনলোড করা যায়। চাইলে অফিস থেকেও সংগ্রহ করা যায়।
উপসংহার
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে তা জানা থাকলে পুরো প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
ভুল তথ্য দ্রুত ঠিক করে ফেললে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হয় না। স্কুল ভর্তি থেকে শুরু করে পাসপোর্ট বা চাকরির সব কাজে সঠিক সনদ জরুরি।
অনলাইন আবেদন এবং নির্ভুল কাগজপত্র জমা দিলে অল্প সময়েই সংশোধিত সনদ পাওয়া যায়। তাই দেরি না করে প্রয়োজন হলে আজই আবেদন করুন।
আরও পড়ুনঃ সিমের মালিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম
তাই ভুল না করে এখনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম জেনে আবেদন করুন।
টেক নিউজ আপডেট সবার আগে পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


