বাংলাদেশে অবৈধ বা অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন ব্যবহারের যুগ শেষ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে চালু হচ্ছে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) সিস্টেম। এই প্রযুক্তি চালু হলে দেশের সব অনিবন্ধিত বা অবৈধ ফোন বন্ধ হয়ে যাবে।
Content Summary
কেন বন্ধ করা হচ্ছে অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন?
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ করার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা, প্রতারণা রোধ, ও রাজস্ব সুরক্ষা। নিচে সহজভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো —
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
অনিবন্ধিত বা অবৈধ মোবাইল ফোন দিয়ে অনেক সময় অপরাধমূলক কার্যক্রম যেমন প্রতারণা, হুমকি, বা স্ক্যাম পরিচালিত হয়।
NEIR সিস্টেম চালুর মাধ্যমে প্রতিটি ফোনের আইএমইআই (IMEI) নম্বর ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ও সিম কার্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এতে কোনো ফোন দিয়ে অপরাধ ঘটলে সহজেই মালিককে শনাক্ত করা যাবে।
সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা
প্রতিবছর বাংলাদেশে হাজার হাজার নকল ও অবৈধভাবে আমদানিকৃত ফোন বিক্রি হয়, যেগুলোর ওপর কোনো কর বা শুল্ক দেওয়া হয় না।
এই ফোনগুলো বন্ধ করলে সরকার বিলিয়ন টাকার রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্পও সুরক্ষিত থাকবে।
নকল ও চোরাই ফোন রোধ
অবৈধভাবে দেশে আনা অনেক ফোনে নকল আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করা হয়। এর ফলে একটি ফোন চুরি হলেও সেটি শনাক্ত করা কঠিন হয়।
NEIR চালুর পর, নকল বা চোরাই ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, ফলে ফোন চুরি ও কালোবাজার কমবে।
টেলিকম খাতের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
প্রতিটি ফোনের তথ্য যদি নিবন্ধিত থাকে, তাহলে অপারেটররা সহজে গ্রাহকের সত্যতা যাচাই করতে পারবে।
এটি সিম প্রতারণা, ভুয়া রেজিস্ট্রেশন, এমএফএস (Mobile Financial Service) জালিয়াতি ইত্যাদি প্রতিরোধ করবে।
দেশীয় উৎপাদন শিল্পের সুরক্ষা
দেশে বর্তমানে অনেক কোম্পানি যেমন ওয়ালটন, স্যামসাং, ওপো, ইনফিনিক্স স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন তৈরি করছে।
অবৈধ আমদানি বন্ধ হলে স্থানীয় উৎপাদকরা বাজারে সঠিক প্রতিযোগিতা করতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো।
সংক্ষেপে
| কারণ | উদ্দেশ্য |
|---|---|
| নিরাপত্তা | অপরাধ দমন ও ফোন ট্র্যাকিং |
| রাজস্ব | সরকারের ট্যাক্স সুরক্ষা |
| নকল ফোন রোধ | বৈধ পণ্য ব্যবহার উৎসাহিত করা |
| টেলিকম স্বচ্ছতা | গ্রাহক যাচাই সহজ করা |
| দেশীয় শিল্প সুরক্ষা | স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো |
সোজা কথায়, অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো —
- নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
- অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা
- রাষ্ট্রের রাজস্ব রক্ষা করা
- প্রযুক্তিগত স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা
আরও পড়ুনঃ প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদনের যোগ্যতা কি কি?। সম্পূর্ণ গাইডলাইন ২০২৬
অবৈধ মোবাইল ফোন কোনগুলো?

অবৈধ মোবাইল বলতে বোঝায় এমন ফোন যেগুলো—
- অফিশিয়াল অনুমতি ছাড়া বিদেশ থেকে আনা হয়েছে
- আইএমইআই (IMEI) নম্বর ভুয়া বা নকল
- বাংলাদেশে বিক্রির আগে বিটিআরসি অনুমোদন নেওয়া হয়নি
এইসব ফোনগুলো NEIR সিস্টেম চালুর পর দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে আর কাজ করবে না।
কবে বন্ধ হবে অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন?
সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এর মানে, ওই তারিখের পর যদি আপনার ফোনের IMEI নিবন্ধিত না থাকে, তাহলে সেটি দিয়ে কল, এসএমএস বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুনঃ বয়স্ক ভাতা চেক করার নিয়ম
মোবাইল ফোনের নিবন্ধন চেক করার উপায়
আপনি চাইলে নিজেই জেনে নিতে পারেন আপনার মোবাইল ফোনটি বৈধ না অবৈধ।
ধাপ ১: মোবাইলের ডায়ালপ্যাডে টাইপ করুন *#06# এতে আপনি আপনার ফোনের IMEI নম্বর দেখতে পাবেন।
ধাপ ২: এখন যান neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে।
ধাপ ৩: সেখানে “Check IMEI Status” অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার IMEI নম্বর লিখুন।
ধাপ ৪: “Submit” ক্লিক করলে সাথে সাথেই জানবেন আপনার ফোনটি বৈধ (Approved) নাকি অবৈধ (Unapproved)।
এনইআইআর সিস্টেম কি
NEIR (National Equipment Identity Register) হলো একটি কেন্দ্রীয় সিস্টেম যা প্রতিটি ফোনের IMEI নম্বরকে ব্যবহারকারীর NID এবং SIM তথ্যের সাথে যুক্ত করে রাখবে।
এতে করে—
- বৈধ ও অবৈধ ফোন সহজেই শনাক্ত হবে
- নকল ফোন বাজার থেকে বন্ধ হবে
- মোবাইল চুরি হলে সেটি ব্লক করা যাবে
- টেলিকম খাতে প্রতারণা কমবে
- রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে
এনইআইআর বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করছে বিটিআরসি, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, এবং টেলিটক।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা | বিকাশ লোন পাওয়ার নিয়ম ও সুবিধা
কেন এই ব্যবস্থা জরুরি
অবৈধ মোবাইল ব্যবহারে সরকার প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি নকল ও চোরাই ফোন দিয়ে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
NEIR চালুর ফলে—
- অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ডিভাইস শনাক্ত করা যাবে
- সিম প্রতারণা ও স্ক্যাম রোধ হবে
- ইকেওয়াইসি (eKYC) প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে
- দেশীয় মোবাইল শিল্প সুরক্ষিত হবে
সচেতনতা জরুরি
সরকার সবাইকে বৈধ মোবাইল ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে। যদি আপনার ফোন অবৈধ হয়, তাহলে ১৬ ডিসেম্বরের আগে সেটি নিবন্ধন করে নিন, নইলে সেটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।
সারসংক্ষেপে
| বিষয় | তথ্য |
| কার্যক্রমের নাম | এনইআইআর (NEIR) |
| চালুর তারিখ | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ |
| লক্ষ্য | অবৈধ মোবাইল বন্ধ ও বৈধ ডিভাইস শনাক্ত |
| পরিচালনায় | বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটররা |
| চেক করার ওয়েবসাইট | neir.btrc.gov.bd |
আরও পড়ুনঃ আপনার নামে কয়টি সিম রেজিস্ট্রেশন করা আছে জানবেন কিভাবে
FAQs (সাধারণ প্রশ্নোত্তর)
১৬ ডিসেম্বরের পর সেটি দিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে না।
হ্যাঁ, NEIR ওয়েবসাইটে গিয়ে IMEI রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
হ্যাঁ, মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে সেই ফোন স্থায়ীভাবে ব্লক করা হবে।
যদি ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করা হয়, তাহলে সেটি বৈধ হিসেবে নিবন্ধন করা যাবে।
ফোন নিরাপত্তা বাড়বে, প্রতারণা কমবে, এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব সুরক্ষিত থাকবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের টেলিকম খাত এখন আরও নিরাপদ ও আধুনিক হতে যাচ্ছে। NEIR সিস্টেম চালুর মাধ্যমে অবৈধ মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ হবে এবং নাগরিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
তাই আজই আপনার ফোনের IMEI স্ট্যাটাস চেক করুন, আর বৈধ ফোন ব্যবহারে সচেতন হোন।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


