বাংলাদেশে জমির মালিকানা বৈধ করতে বর্তমানে অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম অনুসরণ করতেই হবে। অনেকেই মনে করেন দলিল থাকলেই জমির মালিকানা প্রমাণ হয়, কিন্তু ২০২৩ সালের নতুন আইনের পর এই ধারনা আর কার্যকর নয়।
এখন যে কোনো জমি কেনা বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মাত্রই নামজারি করতে হবে। অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম সহজ হলেও সঠিকভাবে না জানলে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তাই জমির নিরাপত্তা, ভবিষ্যতে বিক্রি, মালিকানা পরিবর্তন বা খাজনা প্রদান—সব কিছুর জন্যই এখন নামজারি বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ডিজিটাল নামজারি ব্যবস্থা চালু হওয়ায় নাগরিকরা আর ঘুরাঘুরি না করে ঘরে বসেই সব সম্পন্ন করতে পারেন।
অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম শিখে নিলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা, মালিকানা বিরোধ, কিংবা জমি অন্যের কাছে বিক্রির ঝুঁকিও কমে যায়।
সরকার জানিয়েছেন, জমি কেনা বা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করা হলে দু–তিন ধাপেই ফাইল অনুমোদন হয়ে যায়। তাই জমির নিরাপত্তার জন্য এখনই অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম জানা জরুরি।
Content Summary
জমির নামজারি কি?
জমির নামজারি হলো জমির দলিল, মালিকানা হস্তান্তর বা উত্তরাধিকারসূত্রে অর্জিত সম্পত্তিকে সরকারি রেকর্ডে আপনার নামে যুক্ত করার আইনসম্মত প্রক্রিয়া। দলিল থাকলে মালিকানা কাগজে পাওয়া যায়, কিন্তু নামজারি না হলে সরকারিভাবে সেই মালিকানা স্বীকৃতি পায় না।
অর্থাৎ জমির রেকর্ডে আপনার নাম যুক্ত করাই নামজারি।
এই নামজারি না হলে জমির মালিক হিসেবে সরকারি কোনো নথিতে পরিচিত হওয়া যায় না, ফলে জমি বিক্রি করা, হস্তান্তর, খাজনা প্রদান এমনকি ভবিষ্যতে মামলা মোকদ্দমায় নিজস্ব জমির প্রমাণ দিতে সমস্যায় পড়তে হয়।
নতুন আইনে উল্লেখ আছে যে জমির নিয়মিত মালিকানা রাখতে অবশ্যই নামজারি করতে হবে।
তাই জমি কিনলেই বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেলে দ্রুত নামজারি করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ অনির্দিষ্টকালের জন্য মোবাইল দোকান বন্ধ ঘোষণা কেন, কী হচ্ছে এখন?
নতুন নিয়মে জমির নামজারি করার নিয়ম

নতুন আইন এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম অনেক সহজ হয়েছে।
এখন আর ইউনিয়ন বা ভূমি অফিসে গিয়ে ঘুরাঘুরি করার দরকার নেই।
আবেদন সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালি জমা নেওয়া হচ্ছে।
প্রথমে land.gov.bd সাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়, এরপর ক্রয়কৃত জমির দলিল, দাখিলা, নকশা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র স্ক্যান কপি আপলোড করতে হয়।
আবেদন জমা হলে এসএমএসের মাধ্যমে শুনানির তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রয়োজন হলে শুনানিতে উপস্থিত হতে বলা হয়।
যাচাই–বাছাই শেষে রেকর্ডে মালিকানা পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নামে নামজারি সম্পন্ন করা হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী দলিল থাকলেই মালিকানা নয়, বরং রেকর্ডে নাম যুক্ত থাকলেই সেটি বৈধ মালিকানা হিসেবে গণ্য হবে।
সরকার জানিয়েছে, জমি কেনার সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেবা সম্পন্ন করা হবে।
আরও পড়ুনঃ ফ্রি রাউটার সহ সরকারি জিপন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার নিয়ম
নামজারি প্রক্রিয়ার ধাপগুলো
অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম বাস্তবে অনুসরণ করতে হলে কয়েকটি ধাপ পূরণ করতে হয়। প্রথমে land.gov.bd সাইটে নিজের অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়।
এরপর “Mutation Application” সিলেক্ট করে ক্রয় করা জমির বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। যথাযথ দলিল, কাগজপত্র, ট্যাক্স বা খাজনার তথ্য আপলোড করতে হয়।
আবেদন জমা দিলে এসএমএস পাঠানো হয় যেখানে শুনানির তারিখ উল্লেখ থাকে।
যদি আপত্তি না আসে, তদন্ত কর্মকর্তার যাচাই শেষে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর রেকর্ড হালনাগাদ হয়ে মালিকের নামে ডিজিটাল খতিয়ান তৈরি হয়।
পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং ট্র্যাকিং সুবিধাযুক্ত হওয়ায় নাগরিকরা নিজেদের আবেদন সময়মতো কোথায় আছে তা দেখতে পারেন।
প্রয়োজনে ১৬১২২–এ ফোন করে সাহায্য নেওয়াও যায়।
আরও পড়ুনঃ টিন সার্টিফিকেট মোবাইল নাম্বার ভুলে গেলে কিভাবে বের করবেন
নামজারি প্রক্রিয়ার ফি?
অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করলে মোট সরকারি ফি ১,১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই ফি জমির ধরন, দলিলের ধরন বা মালিক সংখ্যা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় না। এছাড়া শুনানিতে অতিরিক্ত কোনো সরকারি ফি দিতে হয় না।
পূর্বে বিভিন্নভাবে ফি নেওয়া হলেও এখন সব অনলাইনে জমা দেওয়া যায়।
কোনো অবস্থায় অতিরিক্ত অর্থ দাবি করলে তা আইনবিরুদ্ধ বলে গণ্য হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে নির্ধারিত ফি কাঠামো থাকায় অনিয়ম কমবে এবং সারাদেশে সমান সুবিধা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ অনির্দিষ্টকালের জন্য মোবাইল দোকান বন্ধ ঘোষণা কেন, কী হচ্ছে এখন?
নামজারি না থাকলে যেসব সমস্যায় পড়তে হবে
- সরকারি নথিতে আপনাকে জমির মালিক হিসেবে ধরা হবে না
- জমি বিক্রি, হস্তান্তর বা খাজনা দেওয়া সম্ভব হবে না
- ভবিষ্যতে জমি নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়ার ঝুঁকি থাকবে,
- আপনার নিজের জমি নিজের বলে দাবি করতে পারবেন না
FAQ (প্রশ্ন–উত্তর)
নামজারি ছাড়া জমির মালিকানা সরকারিভাবে স্বীকৃত হয় না। জমি বিক্রি, হস্তান্তর বা আইনি প্রমাণ দেখাতে সমস্যা হয়।
সাধারণত যাচাই–বাছাই ঠিক থাকলে ৩০–৪৫ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন হয়।
হ্যাঁ। আবেদন, স্ট্যাটাস চেক এবং ফি জমা—সব অনলাইনে করা যায়।
ভবিষ্যতে জমি অন্যের নামে বিক্রি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একই জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
দলিল, পূর্বের মালিকের রেকর্ড, খাজনার রশিদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হয়।
উপসংহার
অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম খুব বেশি জটিল নয়। বরং নতুন আইনে এটিকে সহজ, নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করা হয়েছে।
যারা জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাদের জন্য নামজারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল রেকর্ডে নাম যুক্ত থাকলে ভবিষ্যতে আইনি নিরাপত্তা, মালিকানা সুরক্ষা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর সহজ হয়।
অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম অনুসরণ করলে আর ভূমি অফিসে ঘুরতে হয় না।
প্রয়োজনীয় কাগজ প্রস্তুত থাকলে মাত্র কয়েকটি ধাপেই আবেদন সম্পন্ন করা যায়।
তাই দেরি না করে আজই land.gov.bd–এ আবেদন করে জমির মালিকানা বৈধ করে ফেলুন।
আরও পড়ুনঃ টিসিবি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রয়
টেক নিউজ আপডেট সবার আগে পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


