ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি: ছয় রুটে নতুন ভাড়া কার্যকর, জানুন বিস্তারিত

বাংলাদেশে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য ট্রেন দীর্ঘদিন ধরেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে সেই স্বস্তিতে বড় ধাক্কা এসেছে। ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শনিবার থেকে দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে কার্যকর হওয়া এই বাড়তি ভাড়া সরাসরি যাত্রীদের দৈনন্দিন যাতায়াত ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে।

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি এবার আগের মতো সরাসরি টিকিটের দাম বাড়িয়ে নয়, বরং নতুন একটি কৌশল ব্যবহার করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ‘পন্টেজ চার্জ’ নামের এই অতিরিক্ত মাশুল সাধারণ যাত্রীদের কাছে অনেকটাই অজানা ছিল। কিন্তু এর প্রভাব এখন স্পষ্টভাবে টিকিটের দামে দেখা যাচ্ছে।

এই লেখায় আমরা জানবো—কোন কোন রুটে ভাড়া বেড়েছে, পন্টেজ চার্জ আসলে কী, যাত্রীদের ওপর এর প্রভাব কতটা পড়ছে এবং ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত কী বার্তা দিচ্ছে।

আপনি কি কমদামে মিনিট, ইন্টারনেট ও বান্ডেল অফার কিনতে ইচ্ছুক!

ভিজিট করুন 👉

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি কেন করা হলো

বাংলাদেশ রেলওয়ের দাবি অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রেলওয়ের আয় বাড়ানো এবং পুরোনো অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানোর জন্য।

বিশেষ করে বড় ও দীর্ঘ সেতুগুলোর নিয়মিত মেরামত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। সেই ব্যয় মেটাতেই ভাড়ার সঙ্গে পন্টেজ চার্জ যুক্ত করা হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকে টিকিটের দাম সরাসরি না বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় খোঁজা হচ্ছিল। সেই আলোচনার ফল হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত আসে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি সরকারি নীতির অংশ এবং সব রুটে নয়, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু রুটে এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে।

পন্টেজ চার্জ কী এবং কীভাবে ভাড়া বাড়ে

পন্টেজ চার্জ হলো রেলপথে থাকা সেতু বা বিশেষ স্থাপনার জন্য নেওয়া অতিরিক্ত মাশুল। নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুকে ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথ হিসেবে ধরা হয়। ফলে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু কাগজে-কলমে ২৫ কিলোমিটার হিসেবে গণ্য হয়।

এর ফলে ট্রেনের মোট রুটের দৈর্ঘ্য কৃত্রিমভাবে বেড়ে যায় এবং সেই বাড়তি দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়াও বৃদ্ধি পায়।

যাত্রীদের কাছে এটি সরাসরি টিকিটের দাম বাড়ানো না হলেও বাস্তবে একই ফল বয়ে আনে। অনেক যাত্রীই বিষয়টি বুঝতে না পারলেও টিকিট কাটার সময় বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

কোন কোন রুটে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে পন্টেজ চার্জ কার্যকর হয়েছে। এসব রুট হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-জামালপুর এবং ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ। এই রুটগুলোর মোট ১১টি সেতুর জন্য এই অতিরিক্ত মাশুল যোগ করা হয়েছে।

এই রুটগুলো দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ হওয়ায় এখানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী চলাচল করেন।

ফলে ভাড়া বাড়ার প্রভাবও পড়ছে অনেক বেশি মানুষের ওপর। বিশেষ করে কর্মজীবী ও নিয়মিত যাত্রীদের জন্য এটি বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি করছে।

আরও পড়ুনঃ মোবাইলে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম

ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ভাড়ার পরিবর্তন

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ধাপে ধাপে বেড়েছে।

২০১২ সালে যেখানে ভাড়া ছিল ৫৮৫ টাকা, সেখানে এখন পন্টেজ চার্জ যুক্ত হয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৯৪৩ টাকায়। অর্থাৎ এক দশকের একটু বেশি সময়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ভাড়া।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট। কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া এক হাজার ৩২২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৪৯ টাকা।

এসি বার্থের ক্ষেত্রে ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ টাকায়। এই রুটে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম

যাত্রী ও ভোক্তা সংগঠনের প্রতিক্রিয়া

ভাড়া বৃদ্ধির খবরে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, রেলই ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের শেষ ভরসা।

সেখানে বারবার কৌশলে ভাড়া বাড়ানো সাধারণ মানুষের জন্য অন্যায্য চাপ সৃষ্টি করছে।

ভোক্তা সংগঠনগুলোও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ জানিয়েছে, সরকার চাইলে রেলের ভেতরের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করেই রাজস্ব বাড়াতে পারে।

ভাড়া বাড়ানোকে সহজ সমাধান হিসেবে নেওয়া হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর নেতিবাচক হবে।

আরও পড়ুনঃ নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে: সম্পূর্ণ গাইড

FAQs

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি কবে থেকে কার্যকর হয়েছে?

এই নতুন ভাড়া শনিবার ২০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।

পন্টেজ চার্জ কি সব রুটে নেওয়া হচ্ছে?

না, এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ছয়টি রুটে কার্যকর করা হয়েছে।

সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে?

কিছু রুটে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে।

ভবিষ্যতে আরও রুটে ভাড়া বাড়তে পারে কি?

রেলওয়ের রাজস্ব নীতির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আরও রুটে এই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কি কোনো আপত্তি জানানো হয়েছে?

হ্যাঁ, ভোক্তা সংগঠন ও সাধারণ যাত্রীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

উপসংহার

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি কৌশলগত হলেও এর প্রভাব সরাসরি সাধারণ যাত্রীদের ওপর পড়ছে।

পন্টেজ চার্জের মাধ্যমে ভাড়া বাড়ানো প্রযুক্তিগতভাবে যৌক্তিক ব্যাখ্যা পেলেও সামাজিক বাস্তবতায় এটি নতুন চাপ তৈরি করেছে।

রেল দেশের মানুষের জন্য শুধু পরিবহন নয়, জীবনের অংশ।

তাই ভবিষ্যতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যাত্রীদের সক্ষমতা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়াই হবে সবচেয়ে টেকসই পথ।

আরও পড়ুনঃ দলিল আছে তবু দখল থাকবে না পাঁচ ধরনের জমির

এছাড়াও টেক নিউজ আপডেট নিয়মিত আপনার মোবাইলে পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
আপনি কি কমদামে মিনিট, ইন্টারনেট ও বান্ডেল অফার খুঁজছেন!

ভিজিট করুন 👉

━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━

ডিজিটাল টাচ
ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে
Sharing Is Caring:

আমি শেখ মোঃ আমিনুল ইসলাম (সুজন)। ডিজিটাল টাচ ডটকম এর প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক। এইচএসসি (বিজ্ঞান); চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Comment