নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কি? এই সম্পর্কে বাংলাদেশে অনেকেই জানতে চান। যাকাত দেওয়ার নিয়ম কি? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকুন। ইসলামের পাচঁটি মূল স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। সামর্থ্য বানদের জন্য যাকাত দেওয়া ফরজ।
যাকাত দেওয়ার বিধান, পরিমান, যাকাতের নির্ধারিত খাত সম্পর্কে আমাজের আজকের লেখা।
মহান আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। আর ইসলাম ধর্ম কিছু মৌলিক স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। এমন মৌলিক বিষয় গুলো হলো-
Content Summary
- 1 ইসলামের মূল ভিত্তি কয়টি ও কি কি?
- 2 যাকাত কি?
- 3 যাকাত আদায়ের সূচনা – যাকাত কিভাবে দিতে হয়
- 4 যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
- 5 ১। সম্পদের উপর পূর্ন মালিকানা
- 6 ২। সম্পদ প্রবৃদ্ধিশীল হওয়া
- 7 ৩। নিসাব পরিমান সম্পদ
- 8 ৪। মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকা
- 9 ৫। নগদ টাকার যাকাতের হিসাবের পূর্বে ঋণ মুক্ত হওয়া
- 10 ৬। সম্পদ এক বছর স্থায়ী থাকা
- 11 যাকাত আদায়ের খাতসমূহ
- 12 যাকাতের খাত কয়টি? খাতগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা-
- 13 ২। মিসকিনদের উপরঃ-
- 14 ৩। যাকাত আদায়কারী ও এর হেফাজতকারীঃ-
- 15 ৪। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমকে যাকাত দেওয়াঃ-
- 16 ৫। দাস মুক্ত করার জন্যঃ-
- 17 ৬। ঋণগ্রস্তদের ঋণ মুক্তির জন্যঃ-
- 18 ৭। আল্লাহর রাস্তায়ঃ-
- 19 ৮। মুসাফির ব্যক্তিঃ-
- 20 নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কিভাবে করতে হয়
- 21 নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কি প্রশ্নোত্তর
- 22 নগদ টাকার যাকাতের হিসাব নিয়ে সর্বশেষ
ইসলামের মূল ভিত্তি কয়টি ও কি কি?
ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ৫ টি।
১। ইমান
২। সালাত বা নামাজ
৩। সাওম বা রোজা
৪। যাকাত
৫। হজ্জ
এই পাচঁটি মৌলিক বিষয় পালন ব্যতীত কেউ পরিপূর্ণ মুসলিম বা ইমানদার হতে পারে না। তবে এখানে আল্লাহ মানব জাতির জন্য ইসলামকে সহজ করে দিয়েছেন। যেমন-
ইমান, নামাজ বা সালাত, সাওম বা রোজা সকলের জন্যই ফরজ। এবং হজ্জ ও যাকাত শুধু ধনীদের বা সামর্থ্যবানদের উপর ফরজ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা কারোর উপর সাধ্যের বাইরে কোন কিছু বোঝা স্বরূপ দায়িত্ব দেননি।
এই মৌলিক পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে আমাদের আজকের আলোচনা যাকাত সম্পর্কে। যাকাত কাদের কী?
যাকাত কাদের উপর ফরজ?
যাকাতের খাত কী কী? যাকাতের পরিমান কেমন হবে? নগদ টাকার যাকাতের হিসাব ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের লেখা। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত-
যাকাত কি?
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কি | যাকাত দেওয়ার নিয়ম কি?
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ফরজ বিধান গুলোর মধ্যে চতুর্থ। যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্র করা, বৃদ্ধি করা, পরিশুদ্ধ করা। তাই, নগদ টাকার যাকাতের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিলে অর্থ-মাল বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়।
শরিয়তের পরিভাষায়, কোন মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নিসাব পরিমান সম্পত্তির মালিক হলে এবং তা এক বছর তার কাছে থাকলে তবে নির্ধারিত পরিমান অংশ হকদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হলো যাকাত।
এই যাকাত আদায় না করলে মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে বিরোধিতা করা হয়। নিসাব পরিমান সম্পত্তির মালিক হলে এবং তার পরও যদি কোন ব্যক্তি যাকাত আদায় না করে তাহলে তার সম্পূর্ণ সম্পদ তার জন্য হারাম হয়ে যায়। এটি একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা।
যাকাত আদায়ের সূচনা – যাকাত কিভাবে দিতে হয়
ইসলামের প্রচার ও প্রসার সঠিকভাবে করার জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে মহান আল্লাহ তায়ালা যাকাতের নির্দেশ দেন।
তখন ধনী গরীবের মাঝে ভ্রাতৃত্ববন্ধন সৃষ্টির জন্য ২য় হিজরিতে যাকাত ফরজ হয়।
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব ও মালের হিসাব করে ধনীদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহন করা হয়।
তখন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মহানবী (সাঃ) – রাষ্ট্রীয় ভাবে যাকাত ব্যবস্থা চালু করেন। তখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) – হজরত মা’আজ ইবনে জাবাল (রাঃ)- কে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করেন।
তারপর রাসূল (সাঃ) – উনাকে ঘোষণা করে বলেন যে- তাদের জানিয়ে দাও মহান আল্লাহ তায়ালা ধন-মালে সদকা ও যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। যাকাত হলো ধনীদের কাছে থাকা গরীবের গচ্ছিত সম্পদ।
ধনী লোকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহন করে গরীবদের মাঝে তা বন্টন করা হবে।( বুখারী ও মুসলিম)
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
মহান আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিম নর- নারীর উপর যাকাত ফরজ করেন নি। স্বাধীন ও পূর্নবয়স্ক নর-নারীর কাছে যদি নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে তবেই তার উপর যাকাত ফরজ হয়। এছাড়াও যাকাত ফরজ হওয়ার বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে-
১। সম্পদের উপর পূর্ন মালিকানা
প্রথমেই সম্পদের উপর মালিকানা সুনির্দিষ্ট হতে হবে। নগদ টাকার যাকাতের হিসাব বা সম্পদের হিসাব করার পূর্বে সম্পদের উপর অন্যের অধিকার থাকা যাবেনা।
সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট না হলে সেই সম্পদের জন্য যাকাত দিতে হয় না। যেমন- সরকারি মালিকানাধীন সম্পদের যাকাত দিতে হয় না।
অন্যদিকে সমাজের কল্যানের জন্য কোন সম্পদ ওয়াকফ করে দিলে সেই সম্পদের যাকাত দিতে হয় না।
কিন্তু কোন ব্যক্তির জন্য সম্পদ ওয়াকফ করে দিলে তার জন্য যাকাত আদায় করতে হবে।
২। সম্পদ প্রবৃদ্ধিশীল হওয়া
যাকাত আদায়ের জন্য সম্পদের বৃদ্ধি পাওয়ার যোগ্যতা লাগবে। অর্থাৎ সম্পদ উৎপাদনক্ষম বা বৃদ্ধিশীল হতে হবে। যেমন- নগদ অর্থে ব্যবসায়ের জন্য ক্রয়কৃত মাল, গবাদিপশু ইত্যাদি বৃদ্ধিশীল।
তবে যে সকল মাল বৃদ্ধিশীল নয় তার যাকাত আদায় করতে হবে না। যেমন- ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামালের বৃদ্ধি হয় না তাই এর যাকাত ধার্য করতে হবে না।
৩। নিসাব পরিমান সম্পদ
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ইসলামে সম্পদের একটি সীমা নির্ধারন করা হয়েছে। সাধারন্ত ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্নের পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হবে। অথবা উভয়টি মিলে যদি ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যের সমান মূল্যের সম্পদ থাকে তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব ভিন্ন এবং গবাদিপশুর যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে তার হিসাব ভিন্ন হয়। নিম্নে তা পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে।
৪। মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকা
মৌলিক প্রয়োজনে কাজে লেগে যাবে এমন সম্পদের যাকাত আদায় করতে হয় না। কোন সম্পদ যদি সারা বছরের মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকে তবে সেই অবশিষ্ট সম্পদের উপর যাকাত ধার্য করতে হবে।
মৌলিক চাহিদা মধ্যে স্ত্রী, পুত্র, পরিবার-পরিজন, পিতামাতা, নিকট আত্নীয়দের ভরন পোষন ও চাহিদা মেটানোর পর যেই সম্পদ থেকে যাবে সেই সম্পদের উপর যাকাত দিবে। তারপর নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে সেই অর্থ বা মাল প্রদান করবে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- লোকজন আপনার নিকট জানতে চায় ( মহানবী (সাঃ) এর উদ্দেশ্যে), তারা আল্লাহর পথে কি ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।
৫। নগদ টাকার যাকাতের হিসাবের পূর্বে ঋণ মুক্ত হওয়া
যদি কোন ব্যক্তির নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে কিন্তু সে ঋণগ্রস্ত হয় এবং তার নিসাব পরিমান সম্পদ দিয়েও যদি সেই ঋন পরিশোধ করা না যায় তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবেনা।
ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে তবেই কেবল যাকাত দিতে হবে।
কিস্তিতে যদি কোন ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করে তাহলে ঐ বছরের ঋণের টাকা বাদ দিয়ে নিসাব পরিমান সম্পদের যাকাত দিতে হবে।
তবে ঋণের জন্য যাকাত না দিলে অবশ্যই সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এবং ঋণ পরিশোধ শেষে নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।
৬। সম্পদ এক বছর স্থায়ী থাকা
নির্ধারিত পরিমান সম্পদ যদি এক বছর পর্যন্ত কোন ব্যক্তির আয়ত্তে থাকে তবেই তার উপর যাকাত দিতে হয়।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বছর শেষে আয়-ব্যয় হিসাব করে অবশিষ্ট নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে অর্থ-সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
কিন্তু কৃষিকাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবার ফসল উৎপাদনের পর তা থেকে নির্ধারিত পরিমান যাকাত দিতে হয়।
যাকাত কাদের উপর এবং কখন ফরজ হয় তা আমরা জানতে পারলাম। তবে, আপনি কি জানেন কাদেরকে যাকাত প্রদান করা যাবে? এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই অজানা। চলুন জেনে নেই যাকাত আদায় করার খাতসমূহ সম্পর্কে –
যাকাত আদায়ের খাতসমূহ
যাকাত আদায়ের খাত সমূহ বলতে আমরা বুঝি কাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা যাকাতের খাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আটটি খাত নির্ধারন করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“নিশ্চয়ই ছাদাক্কাহ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।“ ( সূরাঃ- আত-তাওবা, আয়াত ৬০)
আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত এই খাতগুলোই শরিয়ত সম্মত। কেননা, এগুলো মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ।
এই খাতেই নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। এই খাতের বাইরে যাকাত দিলে যাকাত পরিপূর্ণ হবেনা।
যাকাতের খাত কয়টি? খাতগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা-
১। ফকীরদের উপরঃ- নগদ টাকার যাকাতের হিসাব
যে ব্যক্তি নিঃসম্বল ও ভিক্ষাপ্রার্থী। মহানবী (সাঃ) দরিদ্রতা তজেকে সর্বদা আশ্রয় চাইতেন মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে। আর ফকীরগন সাধারন্ত দরিদ্র হয়।
তাই ফকীরগন যাকাত পাওয়ার জন্য হকদার। তাই নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে তাদের যাকাত দিতে হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন – তোমরা যদি প্রকাশ্যে ছাদাক্বাহ কর উহা ভালো, আর যদি তোমার গোপনে ছাদাক্বাহ কর এবং দরিদ্রদের দাও তবে তোমাদের জন্য আরও ভালো। ( সূরাঃ- বাক্বারাহ, আয়াত- ২৭১)
২। মিসকিনদের উপরঃ-
মিসকিন হলো ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজন মিটাতে পারেনা। কিন্তু সে কারো কাছে মুখ ফুটে কিছু চাইতেও পারেনা।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন- এমন ব্যক্তি মিসকিন নয় যে একমুঠো খাবার বা দুয়েকটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। বরং মিসকিন তো সেই ব্যক্তি যে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে না।
কিন্তু সে কারো কাছে কিছু চায় না। লোকে তাকে চিনতেও পারে না যাকাত দেওয়ার জন্য।
বর্তমান সমাজের মধ্যবিত্ত মানুষরাই মূলত মিসকিনের এই নিদর্শন।
৩। যাকাত আদায়কারী ও এর হেফাজতকারীঃ-
যাকাতের তৃতীয় হকদার হলো সেই ব্যক্তি যে যাকাত আদায় করে, হেফাযত করে ও যাকাত বন্টনের কাজে নিয়োজিত থাকে। সেই ব্যক্তি যদি ধনীও হয় তবেও সে যাকাতের অংশ গ্রহন করতে পারবে।
তাই যাকাত সম্পর্কিত কাজের কর্মচারী বৃন্দ যাকাত গ্রহন করতে পারবে তার পারিশ্রমিক হিসেবে।
৪। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমকে যাকাত দেওয়াঃ-
ইসলামের প্রচার ও প্রসার করার জন্য অথবা কোন কাফিরের ক্ষতি থেকে বাচার জন্য যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।
কোন অমুসলিম কে যাকাতের অর্থ প্রদান করার মাধ্যমে যদি তার মাঝে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করা যায় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।
তবে যদি কেউ ইসলামের শত্রু হয় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। তার মনে ইসলামের প্রতি টান সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকলে সে যাকাত পাওয়ার যোগ্য। তাকে নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে অর্থ প্রদান করা যাবে।
৫। দাস মুক্ত করার জন্যঃ-
বর্তমান সমাজে ক্রীতদাস প্রথা চালু নেই। কেউ যদি লিখিত কোন চুক্তিতে অন্য কারো দাসে পরিনত হয়। তখন সেই দাসকে মালিকের কাছ থেকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।
বর্তমান সমাজের কোন মুসলিম যদি কোন অমুসলিমের কাছে অর্থের জন্য দাসে পরিনত হয় তাহলে সে এই যাকাতের জন্য আরেকটি হকদার খাত। তাই তাকে নগদ টাকার যাকাতের হিসাব থেকে যাকাত দেওয়া যাবে।
৬। ঋণগ্রস্তদের ঋণ মুক্তির জন্যঃ-
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাত পাওয়ার হকদার। মহানবী (সাঃ) এক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাকাতের অংশ দিতে বলেছেন। এবং তিনি বলেছেন- তিন ব্যক্তির জন্য যাকাতের সাহায্য চাওয়া হালাল।
ক) ঋণের যিম্মাদার ব্যক্তি ( যতক্ষন না তার ঋণ পরিশোধ করে)
খ) যে বালা মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে ধন সম্পদ হারিয়েছে ( স্বাভাবিক সক্ষমতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত)।
গ) যে অভাবগ্রস্থ হয়েছে এবং তার তিন প্রতিবেশী তার অভাবের স্বাক্ষী দেয়।
এই তিন ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবীকা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত। এছাড়া যারা স্বেচ্ছায় যাকাতের সাহায্য গ্রহন করে তা হারাম।
৭। আল্লাহর রাস্তায়ঃ-
মহান আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। আল্লাহ তায়ালার পছন্দনীয় দ্বীন ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য প্রচার, জিহাদ, দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য ব্যয় ইত্যাদি খাত গুলোতে যাকাত প্রদান করা যায়।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন- ধনী ব্যক্তিদের জন্য যাকাত গ্রহন হালাল নয়। তবে পাচঁ শ্রেনীর লোক তা গ্রহন করতে পারবে। যথা- (১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি
(২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী (৩) ধনী কিন্তু ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি (৪) যাকাতের মাল যে নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করে (৫) মিসকিন প্রতিবেশী প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী প্রতিবেশিকে কোন হাদিয়া প্রদান করলে।
৮। মুসাফির ব্যক্তিঃ-
কোন ব্যক্তি যদি সফরে যায় এবং তার পথের প্রয়োজনীয় বস্তু ও পাথেয় যদি শেষ হয়ে যায় তবে তাকে তার বাড়ি পৌঁছানোর পূর্বের পথের প্রয়োজনীয় যাকাত দেওয়া যাবে। সে ব্যক্তি ধনী হলেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।
মুসাফির ব্যক্তিকে নগদ টাকার যাকাতের হিসাব অনুযায়ী অথবা পাথেয় মাল প্রদান করে যাকাত দেওয়া যাবে।
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কিভাবে করতে হয়
কোন ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করে এবং অন্যন্য মালের যাকাতের হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।
সাধারনত কোন অর্থ এক বছর মৌলিক চাহিদা পূরনের পর স্থায়ী থাকলে সেই নগদ অর্থের যাকাত দিতে হয়।
এক্ষেত্রে চাদের হিসাব করে বছর বিবেচনা করা হয়। এবং চন্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়।
যে অর্থ যাকাত আদায়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় সেই নগদ টাকার যাকাতের হিসাব হলো- প্রতি ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত প্রদান করতে হয়।
অর্থাৎ শতকরা ২.৫ ভাগ যাকাত প্রদান করতে হবে। আপনার যাকাতের উপযোগী অর্থের পরিমান যদি-
১০০ টাকা হলে যাকাত ২.৫ টাকা
১০০০ টাকা হলে যাকাত ২৫ টাকা
১০,০০০ টাকা হলে যাকাত ২৫০ টাকা
১,০০,০০০ টাকা হলে যাকাত ২,৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব অনুযায়ী এভাবে নগদ অর্থের যাকাত প্রদান করতে হবে।
তবে স্বর্ন ও রূপা ও অন্যান্য সম্পদ যদি নিসাব পরিমান হয় তাহলে তার মূল্য নির্ধারণ করে সেই মূল্যের শতকরা ২.৫ ভাগ যাকাত প্রদান করতে হবে।
অন্যদিকে, কোন ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্ত হয়। কিন্তু তার সম্পদ যদি ঋণ পরিশোধ করার পরও নিসাব পরিমান থাকে।
তাহলে তার সম্পদ থেকে ঋনের পরিমান বাদ দিয়ে বাকি টাকার যাকাত নির্ধারন করতে হবে।
গবাদিপশুর ক্ষেত্রে নগদ টাকার যাকাতের হিসাব
গবাদিপশু একটি সম্পদ।
তাই গবাদিপশুর যাকাত আদায় করতে হয়। নগদ টাকার যাকাতের হিসাব যেমন রয়েছে তেমনি গবাদিপশুর ও যাকাতের হিসাব রয়েছে।
নিচে গবাদিপশুর যাকাতের হিসাব দেওয়া হলো-
১. গরু– ৩০ টির কম গরু হলে যাকাত ফরজ হয়না।
৩০ টি গরু হলে একটি ১ বছরের বাছুর যাকাত হিসেবে দিতে হয়।
৪০-৫৯ টি গরু হলে ২ বছরের একটি বাছুর দিতে হয়।
৬০ টি গরু হলে ১ বছরের দুটি বাছুর দিতে হয়।
১০০ টি গরু হলে ২টি ১ বছরের ও ১টি ২ বছরের বাছুর যাকাত দিতে হয়।
২. ছাগল– ৪০ টির কম ছাগল হলে যাকাত দিতে হয় না।
৪০-১২০ টি ছাগল হলে ১ বছরের একটি ছাগী যাকাত দিতে হয়।
২০০ টির জন্য ২ টি ছাগল দিতে হয়।
২০১-৩৯৯ পর্যন্ত ছাগল হলে ৩টি ছাগল
তারপর প্রতি ১ শত ছাগলের জন্য একটি করে বৃদ্ধি পাবে।
৩. উট– ৫টি উট হলে যাকাত দিতে হয়।
৫-৯ টি উটের জন্য একটি ছাগল যাকাত দিতে হয়।
২৫-৩৫ টি উট হলে একটি এক বছরের উটনী দিতে হয়।
৩৬-৪৫ টি উট থাকলে একটি ২ বছরের উটনী যাকাত স্ব্রূপ দিতে হবে।
এভাবে একজন মালিকের কাছে এক বছর পর্যন্ত গবাদিপশু স্থায়ী থাকলে উক্ত হারে যাকাত প্রদান করতে হবে।
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কি প্রশ্নোত্তর
যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভ। সমাজের স্থিতি বজায় রাখতে ধনীদের নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলে তার একটি অংশ সমাজের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করাই যাকাত।
শতকরা ২.৫ টাকা টাকা যাকাত দিতে হয় অর্থাৎ ২.৫ ভাগ টাকা যাকাত দিতে হয়।
নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে তা নগদ টাকায় হিসাব করে সেই পরিমান অর্থের ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত দিতে হয়। এভাবেই নগদ টাকার যাকাতের হিসাব করা হয়। ১০০ টাকায় ২.৫ টাকা।
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থ স্তম্ভ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ৮ শ্রেনীর মানুষকে যাকাত দিতে বলেছেন। যথা- ফকীর, মিসকিন, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী, ইসলামের প্রতি কাউকে আকৃষ্ট করতে, ঋণগ্রস্তের ঋণ পরিশোধে, দাসমুক করতে, আল্লাহর রাস্তায় ও মুসাফির ব্যক্তিকে।
নগদ টাকার যাকাতের হিসাব নিয়ে সর্বশেষ
যাকাত মহান আল্লাহ তায়াল্র একটি ফরজ বিধান। সমাজকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে, ইসলামের ভ্রাতৃত্ববন্ধন রাখতে যাকাতের বিকল্প নেই।
যাকাত গরীবদের হক। তাই আমাদের যাদের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হয়েছে সকলেরই উচিৎ সঠিকভাবে যাকাত আদায় করা।
এতে আমাদের সম্পদ পবিত্র হবে। এর মাধ্যমে ফরজ আদায় হবে। এবং মহান আল্লাহ তায়ালা কে সন্তুষ্ট করা যাবে।
আমাদের আজকের মূল বিষয় ছিলো নগদ টাকার যাকাতের হিসাব।
আশা করি নগদ টাকায় কীভাবে যাকাত আদায় করতে হয় এবং যাকাতের অন্যান্য তথ্য আপনাদের সটজিকভাবে দিতে পেরেছি। ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।
অনলাইনে ঘরে বসে টাকা ইনকাম, টেলিকম অফার, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা অফার ও ইন্টারনেট থেকে সঠিক তথ্য পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়ের সাইট।
জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
আরও পড়ুনঃ
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।