হোয়াটসঅ্যাপ এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যক্তিগত কথা বলা, অফিসের কাজ, ব্যবসায়িক আলোচনা এমনকি পড়াশোনার গ্রুপ চ্যাট সবকিছুতেই এই অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত বিশাল একটি প্ল্যাটফর্ম হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি কোনো ফি নেয় না।
তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা ইনকাম করে?
প্রথম নজরে মনে হতে পারে, এত সার্ভার, ডেটা সেন্টার আর প্রযুক্তি খরচ চালানো সম্ভব কীভাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হোয়াটসঅ্যাপ একটি সুপরিকল্পিত ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় করে থাকে।
এই আয়ের উৎস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নয়, বরং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট সেক্টর থেকে আসে।
এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় বুঝে নেব হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা ইনকাম করে, তাদের আয়ের মূল উৎসগুলো কী এবং কোন কোন উপায়ে তারা এই ফ্রি অ্যাপটিকে একটি লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তর করেছে।
Content Summary
হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা ইনকাম করে
হোয়াটসঅ্যাপ মূলত সাধারণ ব্যবহারকারীদের থেকে কোনো অর্থ নেয় না। তাদের আয়ের মডেল পুরোপুরি নির্ভর করে ব্যবসায়িক গ্রাহকদের ওপর।
অর্থাৎ আপনি একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে বিনামূল্যে সেবা পেলেও, বিভিন্ন কোম্পানি এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপকে অর্থ প্রদান করে।
হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা এই অ্যাপটিকে একটি শক্তিশালী কমিউনিকেশন টুল হিসেবে তৈরি করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, সাপোর্ট, অর্ডার কনফার্মেশন ও নোটিফিকেশন পাঠানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। এসব সুবিধার জন্য তারা নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে।
এভাবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক ব্যবহারও বাড়ছে। যত বেশি মানুষ অ্যাপটি ব্যবহার করছে, তত বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখানে আসতে আগ্রহী হচ্ছে।
এটিই হোয়াটসঅ্যাপের আয়ের মূল ভিত্তি।
হোয়াটসঅ্যাপের অর্থ আয়ের কৌশল
- সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি কোনো টাকা নেয় না
- হোয়াটসঅ্যাপের মূল আয় আসে ব্যবসা ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে
- WhatsApp Business Platform ব্যবহার করতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফি দিতে হয়
- গ্রাহকদের কাছে অটোমেটেড মেসেজ, নোটিফিকেশন ও কাস্টমার সাপোর্ট দেওয়ার জন্য চার্জ নেওয়া হয়
- প্রতি বিজনেস মেসেজ বা চ্যাট সেশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে টাকা আয় করে
- ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের বিজ্ঞাপন থেকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে নেওয়ার ফিচার থেকে বড় অঙ্কের আয় হয়
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এই “Click to WhatsApp” বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ প্রদান করে
- হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে ব্র্যান্ড ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে স্পন্সরড কনটেন্ট চালাতে পারবে
- পেমেন্ট ও কমার্স ফিচার চালু হলে সেখান থেকেও কমিশন আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে
- বিশাল ব্যবহারকারী সংখ্যার কারণে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবসার জন্য সবচেয়ে কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে
আরও পড়ুনঃ সেলফিন ইকো কি: ভয়েসেই ব্যাংকিং লেনদেন এখন বাস্তব
হোয়াটসঅ্যাপের আয়ের উৎস কি
হোয়াটসঅ্যাপের আয়ের উৎস কয়েকটি নির্দিষ্ট খাতে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিজনেস সার্ভিস এবং বিজ্ঞাপনভিত্তিক ফিচার। ব্যক্তিগত চ্যাট থেকে তারা সরাসরি কোনো আয় করে না, বরং সেই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করেই আয় তৈরি করে।
প্রথম আয়ের উৎস হলো হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস প্ল্যাটফর্ম। বড় কোম্পানি, ব্যাংক, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং সার্ভিস প্রোভাইডাররা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে। প্রতি মেসেজ বা সেশন অনুযায়ী তাদের অর্থ দিতে হয়।
দ্বিতীয় আয়ের উৎস হলো বিজ্ঞাপন সংযুক্ত চ্যাট সিস্টেম।
ব্যবহারকারী যখন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের কোনো বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে, তখন সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে সেই ব্যবসার সাথে চ্যাট শুরু হয়।
এই সুবিধার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মেটাকে অর্থ দেয়, যা শেষ পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপের আয়ের অংশ হয়।
কোন কোন উপায়ে হোয়াটসঅ্যাপ টাকা ইনকাম করে
হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমানে কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে নিয়মিত রাজস্ব আয় করছে। এর মধ্যে কিছু পদ্ধতি ভবিষ্যতে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একটি বড় উপায় হলো প্রিমিয়াম বিজনেস মেসেজিং। ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকদের পাঠানো অটোমেটেড মেসেজ, কাস্টমার সাপোর্ট এবং নোটিফিকেশন পাঠাতে নির্দিষ্ট চার্জ নেওয়া হয়। বিশেষ করে ব্যাংকিং এলার্ট, টিকিট বুকিং, রিফান্ড আপডেটের মতো সেবাগুলো এর আওতায় পড়ে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল। এখানে ব্র্যান্ড ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো একমুখীভাবে তথ্য প্রচার করতে পারে। ভবিষ্যতে এই চ্যানেলে স্পন্সরড কনটেন্ট ও প্রোমোশন যুক্ত হলে আয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে লাভজনক উপায় হিসেবে বিবেচিত হয় বিজ্ঞাপন থেকে চ্যাটে নেওয়ার ফিচার। মেটার তথ্যমতে, এই একক ফিচার থেকেই বছরে বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে।
কারণ এতে ব্যবসার জন্য সরাসরি কাস্টমার কনভার্সন সহজ হয়ে যায়।
FAQs
না, হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি ব্যক্তিগত চ্যাটের ডেটা বিক্রি করে না। তবে ব্যবহারকারীর আচরণ ও ইন্টারঅ্যাকশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিজ্ঞাপন উন্নত করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
বর্তমানে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ফ্রি থাকবে বলেই মেটা জানিয়েছে। ভবিষ্যতে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম ফিচার আসতে পারে।
ছোট ব্যবসার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাপ ফ্রি। তবে বড় পরিসরে ব্যবহার করলে প্রিমিয়াম চার্জ প্রযোজ্য হয়।
না, ব্যক্তিগত চ্যাটে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না। বিজ্ঞাপন মূলত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে নিয়ে আসে।
হোয়াটসঅ্যাপ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে, যা ব্যক্তিগত চ্যাটকে নিরাপদ রাখে। তবে ব্যবহারকারীর কিছু মেটাডেটা সংগ্রহ করা হয়।
Conclusion
সব মিলিয়ে বলা যায়, হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা ইনকাম করে তা বুঝতে হলে তাদের ব্যবসায়িক মডেলটি জানতে হবে।
তারা সাধারণ ব্যবহারকারীদের ফ্রি সেবা দিয়ে বিশাল একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এই নেটওয়ার্কই তাদের মূল শক্তি।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপন এবং প্রিমিয়াম সার্ভিসের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ নিয়মিত আয় করছে।
ভবিষ্যতে নতুন ফিচার ও ডিজিটাল লেনদেন যুক্ত হলে হোয়াটসঅ্যাপের আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।
আরও পড়ুনঃ রবি বান্ডেল অফার ৩৬৫ দিন মেয়াদ
এছাড়াও টেক নিউজ আপডেট নিয়মিত আপনার মোবাইলে পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


