কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী একজন বাংলা ভাষাভাষীর জন্য জানা জরুরী। কেননা বাংলা ভাষার জন্য যারা কাজ করেছেন তদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলাম।
বিদ্রোহী কবি হিসাবে যিনি বিশেষভাবে পরিচিত তিনি হলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
তিনি একই সাথে বাংলাদেশের একজন কবি, সংগীতজ্ঞ এবং দার্শনিক। একজন বাংলা ভাষাভাষী হিসাবে কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী পড়া ও জানার প্রয়জনিয়তা রয়েছে।
Content Summary
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী
আজকের আর্টিকেলে আমরা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী এবং শৈশব থেকে কর্মজীবনের কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।
বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখাগুলো তৎকালীন ব্রিটিশদের নানা জুলুমের প্রতবাদ হসেবে ভূমিকা রাখে।
জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তার মধ্যে থাকা এ বিপ্লবী প্রয়াস তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল।
আজকের আর্টিকেলে আমরা কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরব।
আশা করছি লেখাটি আপনার ভালো লাগবে। চলুন তাহলে জেনে নিই কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিপ্লবী জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ
কাজী নজরুল ইসলাম জন্ম ও মৃত্যু
কাজী নজরুল ইসলাম কে কবে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়
১৮৯৯ সালের ২৪শে মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বিখ্যাত কবি।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
‘দুখু মিয়া’ নামে ডাকা
তার পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদ ইমাম এবং মা ছিলেন গৃহবধূ।
১৯০৮ সালে যখন তার বাবা মারা গিয়েছিল তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। সেই জন্য তাঁর প্রথম জীবনে তিনি অনেক কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই কারণে গ্রামবাসীরা কাজী নজরুল ইসলাম ‘দুখু মিয়া’ ডাকনাম দিয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম জীবনীতে বাল্য বয়সেই তিনি লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেটোর (বাংলার গ্রামিন অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল) দলে যোগ দেন।
তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের একজন বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন।
শিক্ষাজীবন
বন্ধুরা কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী পড়ছেন অথচ তাহার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নন এমন লোকের সংখ্যা অনেক কম।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৯১০ সালে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে এবং পরবর্তীতে মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। কিন্তু তিনি আর্থিক সঙ্কটের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনো করার পর পড়াশোনা ত্যাগ করেন।
তারপর তিনি আবার কাজে যোগ দেন এবং রান্নার কাজ করতে শুরু করেন। পরে স্থানীয় আসানসোলের বেকারি ও চায়ের দোকানে চাকরি নেন তিনি।
চায়ের দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ’র সাথে তার পরিচয় হয়।
দোকানে কাজ করার পাশাপাশি নজরুল যে কবিতা এবং ছড়া রচনা করতেন তা দেখে রফিজউল্লাহ মুগ্ধ হন এবং ১৯১৪ সালে তিনি কবি নজরুলকে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন।
পরবর্তীতে ১৯১৫ সালে নজরুল আবার রানীগঞ্জে সিয়ারসোল রাজ স্কুলে চলে যান এবং সেখানে তিনি অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয় অধ্যয়ন করেন।
আরও পড়ুনঃ
কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না?
কর্মজীবন
১৯১৭ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং তিন বছর ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার পদে নিযুক্ত ছিলেন।
১৯১৯ সালে সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার লেখা “বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী” সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও সেইসময় তিনি আরও গল্প লিখেছিলেন হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে” ইত্যাদি।
তার লেখায় তিনি সবসময় ফ্যাসিবাদ (কর্তৃত্বমূলক জাতীয়তাবাদের একটি রূপ) এবং যে কোনও ধরণের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম জীবনীতে সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন এবং সেসময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ার কারণে আর যাওয়া হয়নি।
১৯২০ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। তারপর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা
কলকাতায় ফিরে লেখালেখির দিকে মনোনিবেশ করেন। সেখানে তিনি তার প্রথম কবিতা লেখেন ‘বাঁধন-হারা’। অর্থাৎ কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা হচ্ছে ‘বাঁধন-হারা’।
১৯২২ সালে তিনি বিদ্রোহী শিরোনামের একটি কবিতা লিখেছিলেন যা “বিজলি” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।
কবিতাটি এক বিদ্রোহী সংবেদনশীলতার বর্ণনা দিয়েছীল এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকের কাছ থেকে এই কবিতাটি প্রশংসা পেয়েছিল।
১৯২১ সালে অক্টোবর মাসে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের শান্তিনিকেতনে সর্বপ্রথম কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেখা হয় এবং তারপর থেকে প্রায় কুড়ি বছর পর্যন্ত এই দুই কবির মধ্যে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ থাকে। তারা দুজনই একে অপরকে গভীর শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালোবাসতেন।
আরও পড়ুনঃ
হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়? হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায়?
কাগজ দিয়ে বানানো সবচেয়ে দামি জিনিস কি
স্বাধীনতা কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম
অবশেষে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা না নেওয়ার জন্য “খিলাফত” আন্দোলন এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সমালোচনা করেন।
তিনি জনগণকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একত্র করেছিলেন এবং ‘শ্রমিক প্রজা স্বরাজ দল’ সংগঠিত করেছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম জীবনীতে তিনি সমাজের দুর্বল অংশের জন্য কবিতা এবং গান রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তার রচনাগুলি বিদ্রোহ থেকে ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।
- তিনি তার জীবনদশায় মোট ৮০০ টি গান লিখেছিলেন।
- ১৯২৬ সালে তিনি “দারিদ্র্য শিরোনাম” নামক একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন যা জনসাধারণের কাছে বিশেষভাবে প্রশংসা পেয়েছিল।
- তিনি বিভিন্ন সংগীত পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
- ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ার জীবনে সবচেয়ে বৃহত্তম কাজ ছিল ‘সিরাজ-উদ-দৌলা’ নামে একটি বায়োপিক নাটকের জন্য গান ও সঙ্গিত রচনা এবং পরিচালনা করা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবন অনেক অবদান রেখেছে।
নিজ লেখা লেখির দ্বারা তিনি সবাইকে স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে শিখিয়েছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে অনেক কিছু শিখার আছে।
তিনি স্পষ্টভাষী লোক ছিলেন। আসুন আমরাও স্পষ্টভাষী হই।
১৯৪২ সালে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুষ্পষ্টরুপে জানা গিয়েছিল ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তার মানসিক ভারসাম্যের অবনতি ঘটে।।
১৯৫২ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে শারীরিক সমস্যার জন্য করাচির একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপরে ভিয়েনায় চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে তার পিক্স নামক একটি রোগ ধরা পড়ে।
তিনি ১৯৫৩ সালে অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন।
১৯৭৬ সালে ২৯ আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম যে পদক গুলি অর্জন করেন
১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা সাহিত্যে ভূমিকা রাখার জন্য জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯৬০ সালে তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ সম্মাননা পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সরকার পক্ষ থেকে ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুনঃ
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?
ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান | সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়?
কাজী নজরুল ইসলাম FAQS
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা ‘বাঁধন-হারা’।
১৯৭২ সালের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনেক গুলি ছদ্মনাম রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের ছদ্মনামগুলি হল ধূমকেতু, নুরু, নরু, নজরুল, বিদ্রোহী কবি, মোহম্মদ লোক হাসান, বাগনান, কহ্লন মিশ্র ইতাদি।
বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে অগ্নিবীণা কাব্য কাকে উৎসর্গ করেন।
১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি। কাজী নজরুল ইসলাম আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য জেলে যান।
শেষ কথা
আশা করছি আপনি কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী আরটিকেলটি শেষ পর্যন্ত পরেছেন।
যদি পড়ে থাকেন তাহলে আপনার এই বিষয়ে আর কোনো সমস্যা থাকার কথা না।
তবে কাজী নজরুল ইসলাম জীবনীর একটি সংক্ষিপ্ত পোস্ট এটি।
আপনি যদি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে আরও বেশি জানতে চান তবে এই বিষয়ে একটি বই রয়েছে, তা পড়তে পারেন।
তারপরও যদি আপনার কোনো মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন।
সব বিষয়ে নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট।
টেলিকম অফার ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।