বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের ব্যবসা শুরু করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স অপরিহার্য। এটি এক ধরনের সরকারি অনুমতিপত্র যা ব্যবসা পরিচালনার বৈধতা নিশ্চিত করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ট্রেড লাইসেন্সের ফি কত, কোথায় আবেদন করতে হয়, কিংবা নবায়ন প্রক্রিয়াটি কেমন। আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিত জানবো ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
বর্তমানে ২০২৫ সালের নতুন ফি তালিকা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের ধরণ ও অবস্থান অনুযায়ী লাইসেন্স ফি ভিন্ন হয়ে থাকে।
কেউ যদি ছোট ব্যবসা চালান, তাদের জন্য ফি তুলনামূলক কম, আর বড় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য ফি কিছুটা বেশি। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়েও এই হার আলাদা হয়। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে নিজের এলাকা ও প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী ফি জানা অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া এখন ই-ট্রেড লাইসেন্স বা অনলাইন লাইসেন্স আবেদনও সম্ভব হয়েছে। এতে সময় কম লাগে এবং আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়েছে।
তবে ভুল তথ্য দিলে বা নিয়ম না মানলে লাইসেন্স বাতিলের ঝুঁকিও থাকে। তাই সঠিক তথ্য জানা এবং নির্ধারিত ফি পরিশোধ করেই ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
Content Summary
ট্রেড লাইসেন্স কি?
ট্রেড লাইসেন্স হলো ব্যবসা করার একটি আইনি অনুমতি। এটি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ যেমন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদান করা হয়। ব্যবসার বৈধতা প্রমাণের জন্য এটি বাধ্যতামূলক।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ব্যবসার ধরন, কর পরিশোধের তথ্য ইত্যাদি ট্রেড লাইসেন্সে উল্লেখ থাকে।
এটি সাধারণত এক বছরের জন্য কার্যকর থাকে এবং প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা বেআইনি হিসেবে গণ্য হয়।
ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা ২০২৫ ২০২৬

ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের ধরন ও অবস্থানের উপর।
ছোট ব্যবসার জন্য ফি সাধারণত ২০০–৫০০ টাকার মধ্যে, মাঝারি ব্যবসার জন্য ১,০০০–৫,০০০ টাকা এবং বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০,০০০–২৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ—
- ক্ষুদ্র ব্যবসা (দোকান, হেয়ার কাটিং সেলুন, চায়ের দোকান): ২০০–৫০০ টাকা
- মাঝারি ব্যবসা (ফার্মেসি, রেস্টুরেন্ট, স্টেশনারি): ১,০০০–৫,০০০ টাকা
- বৃহৎ ব্যবসা (ফ্যাক্টরি, কোম্পানি, ট্রেডিং ফার্ম): ১০,০০০–২৬,০০০ টাকা পর্যন্ত
লাইসেন্স ফি ছাড়াও আবেদন ফরমের জন্য ৫০ টাকা এবং নামজারির জন্য ১০ টাকা নির্ধারিত।
আরও পড়ুনঃ টিসিবি ডিলার আবেদন করতে কি কি লাগে?
ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা পৌরসভা
পৌরসভা এলাকার জন্য ফি তুলনামূলক কম। এখানে সাধারণ দোকান বা ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ফি ৩০০–৮০০ টাকার মধ্যে হয়।
শিল্প প্রতিষ্ঠান বা মাঝারি আকারের ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি ১,০০০–৩,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
পৌরসভা অফিস থেকে নির্ধারিত ‘কে’ ফরমে আবেদন করতে হয়।
আবেদনপত্রের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ছবি, ভাড়ার চুক্তিপত্র বা মালিকানার প্রমাণ এবং কর রশিদ দিতে হয়।
ফরম জমা দেওয়ার ৩–৫ দিনের মধ্যে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সরেজমিন যাচাই করে লাইসেন্স ইস্যু করে।
আরও পড়ুনঃ ই ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম ও খরচ
ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ
ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণত আরও কম। এখানে ফি ২০০ থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। ছোট মুদি দোকান, ওয়ার্কশপ বা কৃষি ব্যবসার জন্য ফি ২৩০–৫০০ টাকা নির্ধারিত।
তবে ইউনিয়ন পরিষদভেদে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। আবেদন করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, ব্যবসার ঠিকানা এবং কর রশিদ জমা দিতে হয়।
নবায়নের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে ইউনিয়ন পরিষদে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়।
ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা সিটি কর্পোরেশন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ফি তুলনামূলক বেশি কারণ এখানে বড় ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বেশি।
সাধারণ দোকান বা সার্ভিস ব্যবসার জন্য ফি ১,০০০–৫,০০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬,০০০–১০,০০০ টাকা এবং বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৫,০০০–২৬,০০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত।
লাইসেন্স নবায়ন প্রতি বছর সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় ফি জমা দিয়ে করা হয়। ফি জমা দেওয়ার এক দিনের মধ্যেই নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
আরও পড়ুনঃ রেমিট্যান্স সুবিধাসহ এসএমই ডেবিট কার্ড চালু করল প্রাইম ব্যাংক
ট্রেড লাইসেন্স করার সময় যে ভুল গুলি করা যাবে না
ট্রেড লাইসেন্স করার সময় অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে বসেন, যা পরে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সবচেয়ে বড় ভুল হলো — আবেদন ফরমে অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য প্রদান করা।
যেমন, ব্যবসার নাম, মালিকের নাম বা ঠিকানা ভুল দিলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এছাড়া ভাড়ার চুক্তিপত্র বা কর রসিদের কপি সংযুক্ত না করলে আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন মেমোরেন্ডাম, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস সার্টিফিকেট) না জমা দিলে প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
তাই আবেদন করার আগে সব কাগজপত্র যাচাই করে সঠিকভাবে ফরম পূরণ করা জরুরি।
আরেকটি সাধারণ ভুল হলো সঠিক এলাকা বা অঞ্চলের অফিসে আবেদন না করা।
অনেকেই এলোমেলোভাবে আবেদন জমা দেন, ফলে ফাইলটি ভুল বিভাগে চলে যায়। এতে সময় নষ্ট হয় এবং লাইসেন্স ইস্যুতে দেরি হয়।
সঠিক অঞ্চলের অফিস, ওয়ার্ড নম্বর ও কর ফরম নিশ্চিত করে আবেদন করা উচিত।
এছাড়া ভুল তথ্য দিয়ে লাইসেন্স নেওয়া আইনত অপরাধ, যা ভবিষ্যতে ব্যবসা বন্ধ বা লাইসেন্স বাতিলের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ এখন ফেসবুক ভিডিও ভাইরাল হবেই
ট্রেড লাইসেন্স ফি কিভাবে জমা দিতে হয়
ট্রেড লাইসেন্সের ফি জমা দেওয়ার নিয়মটি বেশ সহজ, তবে সঠিকভাবে না জানলে ঝামেলায় পড়া যায়।
সাধারণত সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত ব্যাংকে (যেমন সোনালী ব্যাংক) নির্দিষ্ট কোডের মাধ্যমে ফি জমা দিতে হয়।
নতুন লাইসেন্সের জন্য ফি পরিশোধের আগে আবেদন ফরম জমা দিতে হয় এবং অনুমোদনের পর লাইসেন্স ইস্যুর ফি ব্যাংকে প্রদান করতে হয়। নবায়নের ক্ষেত্রে আগের লাইসেন্স নম্বর অনুযায়ী ফি জমা দেওয়া হয়, যা বছরে একবার করতে হয়।
অনেকে ভুল করে অননুমোদিত মাধ্যম বা অন্য ব্যাংকে টাকা জমা দেন, যা পরে ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
তাই লাইসেন্স অফিস থেকে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট চালান কপি (চালান বহি) ব্যবহার করে ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া উচিত।
ফি পরিশোধের পর ব্যাংকের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ সেটিই লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন ইস্যুর প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
ই-ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্টের সুযোগও আছে, যা আরও দ্রুত ও নিরাপদ পদ্ধতি।
আরও পড়ুনঃ নগদ একাউন্ট হালনাগাদ করুন সহজেই
প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
সাধারণত ৩–৭ কর্মদিবসের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। তবে স্বাস্থ্য বা অগ্নিনির্বাপন বিভাগের যাচাই প্রয়োজন হলে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।
আগের লাইসেন্স কপি, ফি জমার রশিদ এবং আবেদন ফরম জমা দিলেই নবায়ন সম্পন্ন হয়।
সরকারের অনলাইন পোর্টাল বা স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা যায়। আবেদন ফি অনলাইনেই প্রদান করা যায়।
না, এটি নির্ভর করে এলাকার ধরন ও প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর। সিটি কর্পোরেশনে ফি বেশি, ইউনিয়ন পরিষদে কম।
লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করলে আইনত শাস্তি হতে পারে, এমনকি প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি বাধ্যতামূলক আইনি শর্ত। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে নিজের এলাকার ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা জেনে নেওয়া জরুরি।
নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সঠিক নিয়মে লাইসেন্স নিলে ব্যবসা বৈধ হয় এবং আইনি ঝুঁকি কমে।
২০২৫ সালের হালনাগাদ ফি তালিকা অনুযায়ী, ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন—সব ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়া সহজ ও ডিজিটাল হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ এখন ঘরে বসেই পাচ্ছেন টেলিটক সিম অর্ডার করুন
বাংলাদেশের যে এলাকায় থাকেন না কেন ওই এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে আপনার ব্যবসার ধরন বললে তারা ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা বলে দিবে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সকল টেলিকম অপারেটর নিউজ আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।


