প্রিয় পাঠকগণ দুই বিঘা জমি কবিতা টি পড়ার জন্য আপনারা অনেকে গুগলের মাধ্যমে সার্চ করে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে দুই বিঘা জমি কবিতাটি উল্লেখ করব।
এর পাশাপাশি দুই বিঘা জমি কবিতার মূলভাব কি সেই সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। বলতো যদি বলা হয়ে থাকে তাহলে বাঙালিরা বরাবরই কবিতা প্রিয় মানুষ। বিভিন্ন ধরনের কবিতা মানুষের মনকে মুগ্ধ করে।
সেই ধরণের একটি কবিতা হচ্ছে দুই বিঘা জমি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই কবিতাটি সম্পূর্ণ পড়বো এবং এর মূলভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
Content Summary
দুই বিঘা জমি কবিতা এবং কবিতার প্রেক্ষাপট বিস্তারিত ঘটনা
দুই বিঘা জমি কবিতার লেখক হচ্ছেন-
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই –
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, ‘করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, ‘আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’
পরে মাস-দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে –
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য –
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো-ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল।।
নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধুলি –
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ –
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতলস্নেহ।
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধু জল লয়ে যায় ঘরে
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে –
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি, রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।।
ধিক্ ধিক্ ওরে, শত ধিক্ তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার – এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক-পাতা!
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ –
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন –
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ী, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী – হলে দাসী।।
বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি –
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালককালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন –
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।।
হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটিবাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব –
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব।’
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ –
শুনে বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, ‘মারিয়া করিব খুন।’
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, ‘শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!’
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে –
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।
দুই বিঘা জমি কবিতার ব্যাখ্যা – দুই বিঘা জমি কবিতার প্রতিটি লাইনের ব্যাখ্যা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অন্যতম একটি কবিতা কাহিনী হচ্ছে দুই বিঘা জমি।
এই দুই বিঘা জমি কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “চিত্রা” নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে।
বাংলার গ্রাম্য সমাজের শ্রেণীবিভাগ এবং দুর্বল মানুষদের ওপর সকল মানুষদের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরো কবিতাটি সাজিয়েছেন।
এই কবিতাটির মধ্যে কবি গরিব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখেছেন।
এই কবিতায় একজন জমিদার জোর করে একটি লোকের কাছ থেকে তার জমি দখল নেয়ার চেষ্টা করছে।
এবং শেষ পর্যন্ত সে সেই জমি দখল নিয়েছিল এবং সে দখল নেয়ার ঘটনা অতি নিপুণভাবে কবিতার ছন্দে বলা হয়েছে।
এই দুই বিঘা জমির ওপর ভিত্তি করে হিন্দিতে দো বিঘা জমিন চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
দুই বিঘা জমি কবিতার মূলভাব
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাহিনী কবিতা হলো দুই বিঘা জমি। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ” কাহিনী” নামক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতাটি লিখেছেন। এই কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজের গরীব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিক দেখানো হয়েছে।
দুই বিঘা জমি কবিতার প্রেক্ষাপট
দুই বিঘা জমি কবিতার প্রেক্ষাপট প্রেক্ষাপট মূলত সমাজের দরিদ্র অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের নিত্যদিনের জীবন সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা।
সমগ্র কবিতা আমরা দেখতে পেয়েছিদুই বিঘা জমি কবিতায় উপেন একজন দারিদ্র কৃষক। তিনি তার সকল জমি ঋণের দায়ে হারনোর পর বাকি রয়েছে দুই বিঘে জমি ।
আরও পড়ুনঃ
বিদায় অনুষ্ঠানের কবিতা কোনগুলো?
দুই বিঘা জমি কবিতা FAQS
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই বিঘা জমি কবিতার লেখক, এই বিখ্যাত কবিতা দুই বিঘা জমি লিখেছেন।
দুই বিঘা জমি কবিতা থেকে দো বিঘা জমিন হিন্দি চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে দুই বিঘা জমি কবিতা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লেগেছে এবং আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা দুই বিঘা জমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আপনাদের যদি এই কবিতাটি সম্পর্কে আরো কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত থাকে তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
এছাড়াও প্রিয় পাঠকগণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে অনলাইন থেকে আয় সংক্রান্ত আর্টিকেলগুলো লিখে থাকি।
এই আর্টিকেলগুলো পড়লে আপনারা অনলাইন থেকে কিভাবে আয় করা যায় সেই সংক্রান্ত সকল কিছু বিস্তারিত জানতে পারবেন।তাই অবশ্যই ভিজিট করেন আমাদের ওয়েবসাইট এবং আমাদের ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেইজে।
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।