সত্যায়িত মানে কি? | কিভাবে সত্যায়িত করতে হয়

সত্যায়িত মানে কি, দলিল দস্তাবেজ, সনদপত্র, ছবি প্রভৃতি সঠিক হিসেবে নিশ্চিতরূপে প্রমাণের জন্য প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার নিকট থেকে সত্যায়িত করিয়ে নিতে হয়। কিন্তু সত্যায়িত মানে কি এই বিষয়ে অনেকেরই সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

আপনি যদি  সত্যায়িত মানে কি, কিভাবে সত্যায়িত কিভাবে করতে হয়? এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারনা পেতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

সত্যায়িত শব্দের অর্থ কি?

‘সত্যায়ন’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে সত্যতা নিশ্চিতকরণ। ইংরেজি পরিভাষায় একে বলা হয় attestation. এই Attested’ শব্দটির বাংলা শব্দ হিসেবে সত্যায়ন বা সত্যায়িত ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু ‘Attest’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়া, নিশ্চিতরূপে বলা, প্রমাণ করা, প্রকাশ করা ইত্যাদি। 

সত্যায়িত মানে কি? সত্যায়ন কেন করা হয়?

সত্যায়িত মানে কি সত্যায়ন কেন করা হয়
সত্যায়িত মানে কি সত্যায়ন কেন করা হয়

চাকরি বা যে কোনো আবেদনপত্রে সত্যায়িত চাওয়া হয় কারণ আবেদনপত্রে আপনার দাখিলকৃত ডকুমেন্ট সত্যি আছে কিনা অথবা আসল ডকুমেন্টের অনুলিপি তৈরি করা হয়েছে কিনা সেটা একজন তার সিগনেচারের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেবেন।

তবে স্বাক্ষরকারী এমন একজন পেশাগত ব্যক্তি হবেন যার সাক্ষ্য বিশ্বাস করার যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের ধরা হয়। 

এদের মধ্যে দ্বাদশ গ্রেড থেকে উর্ধ্বে বিশেষ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য, পৌর মেয়র, স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান, সরকারি অধ্যক্ষ, ১ম শ্রেণির সরকারি চাকুরিজীবি, গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সত্যায়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।

সমাজে সত্যায়ন শব্দটির ব্যবহার অনেক। সত্যায়িত মানে কি? এর সারমর্ম হচ্ছে, কোন প্রমাণ বা দলিল সঠিক বা সত্য বলে কোন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক কথায় বা লিখিতভাবে সাক্ষর, সমর্থন বা নিশ্চিতভাবে বর্ণনা করা বা ঘোষণা দেওয়াকেই সত্যায়ন বা ‘Attest’ বলে।

এর সারমর্ম থেকে বোঝা গেল ‘Attest’ করার কাজটি হলো একটি আইন। তবে এটিকে একটি সামাজিক প্রথা বা প্রচলিত ব্যবস্থা বলা যেতে পারে কারণ অনেক আগে থেকেই যেকোনো নথি নিশ্চিত করণের জন্য সেগুলোর সত্যায়ন দেখাতে হয়। 

ডকমেন্ট সত্যায়িত উপমহাদেশে কবে চালু হয়?

সত্যায়িত মানে কি বহু আগে সমাজ ব্যবস্থার তাগিদেই ‘Attest’ বা সত্যায়ন প্রথাটি চালু হয়। যার সূচনা হয় সরকারিভাবে ১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের মধ্য দিয়ে।

প্রথমে এর কার্যকারিতা শুরু হয় ভারতের উত্তর প্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে।

তারপর এটি প্রজ্ঞাপন হিসেবে কালের ধারাবাহিকতায় সমগ্র ভারতে চালু হয়।

বৃটিশরা এ দেশের মানুষকে বিশ্বাস করতো না বলেই সমাজকে সুষ্ঠভাবে পরিচালোনার তাগিদেই ভারতবাসীর সঠিক পরিচিতি নিশ্চিত করণের জন্যই ‘Attest’ প্রথা চালু করেছিল। 

আজও সেই ঔপনিবেশিক প্রথা চালু আছে। বর্তমানে সময়ে সবক্ষেত্রেই ‘Attest’ এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।

যেমন বিভিন্ন সরকারী চাকুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, টেন্ডার, ছবি, পাসপোর্ট, ভিসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, নাগরিক সনদপত্র প্রভৃতি সত্যায়িত করে নিতে হয়।

অন্যথায় সেগুলো গ্রহণযোগ্য হয় না। 

সত্যায়িত কারা করেন

সত্যায়িত কাজের জন্য বিবেচিত বা দায়িত্ব প্রাপ্তরা হচ্ছেন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাগণ।

এক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ সত্যায়িত করতে পারেন না। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের জন প্রতিনিধিগণ।

এছাড়াও সরকারি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষকগণ সত্যায়িত করতে পারেন।

কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার, নন ক্যাডার, জনপ্রতিনিধি, নোটারী পাবলিক, পোষ্ট মাষ্টার এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রার্থী বা আবেদনকারী নিজেও তার কাগজপত্র সত্যায়িত করেন।

চারিত্রিক সনদপত্র প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর মেয়র যেই দিক না কেন সেটা সে না জেনেই দেয়।

কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ছাপানো ফরম থাকে সেটা পূরন করে দিলেই কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই ছাড়াই সহি করে দেন।

উল্লেখ্য যে, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌর কর্তৃপক্ষসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চারিত্রিক সনদপত্রে চরিত্র ভাল এই মর্মে হাজার হাজার রঙ্গিন ফরম ছাপানো থাকে

এমনাবস্থায় অনেক সময় মনে হতে পারে ওই সকল এলাকায় কোন খারাপ লোকের অস্তিত্বই নেই। 

চারিত্রিক দোষ থাকলেও জনপ্রতিনিধিগণ সে ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তার জনপ্রিয়তা ঠিক রাখার স্বার্থে ভালো বলে সনদপত্রে উল্লেখ করেন।

এক্ষেত্রে অনেক সময় স্বজনপ্রীতি লক্ষ্য করা যায়।

সহি করা হলে সেই সনদপত্র সত্যায়িত করে চাকরিসহ যেকোনো আবেদনপত্রের সাথে জমা দেওয়া হয়। 

তাহলে এই মিথ্যা সনদপত্রের জন্য দায়ী কে হবেন? সনদপত্র প্রদানকারী স্থানীয় সংস্থা? সত্যায়িতকারী কর্মকর্তা? নাকি যে সত্যায়িত করিয়েছেন সে?

সুতরাং সত্যায়িত মানেই যে সঠিক, বৈধ বা ধোয়া তুলসীপাতা মনে করার কোন প্রয়োজন নেই।

কোনো ব্যক্তি যদি মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে তাহলে সব দায় তার উপরই পড়বে।

ব্লগ লিখে আয় করার উপায়

পরিচিত কেউ না থাকলে, সত্যায়িত কিভাবে করব?

যারা ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে সত্যায়িত না করলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই।

সত্যায়িত না করা হলে যে হয়রানীর স্বীকার হতে হয় বলে এমন কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। 

তবে চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে কোন চাকরির আবেদন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সত্যায়িত কাগজপত্র ও ছবি দিতে হবে। 

আর আপনার একান্ত পরিচিত যদি কেউ না থাকে তাহলে কোন ফাস্ট ক্লাস গেজেট অফিসারের সন্ধান নিতে হবে।

তবে একইসাথে অনেকগুলো কাগজপত্র সহ ছবি সত্যায়িত করে রাখবেন। যাতে আর ভবিষৎ এ হয়রানীর স্বীকার না হতে হয়।

নিজে সত্যায়িত “সিলমোহর” বানিয়ে সত্যায়িত করলে কোন ঝামেলা হবে কি ?

আপনি চাইলে যেকোন সিলমোহর বানানোর দোকান থেকে গিয়ে আপনার ইচ্ছামতো সিল বানিয়ে নিতে পারেন।

এটি সাধারনত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে করা যায় কিন্তু সরকারী চাকরীতে এই কাজ করলে আপনার বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। 

আরও পড়ুনঃ

বীর উত্তম কতজন | বীর উত্তম উপাধী কেন দেয়া হয়েছিল

১০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল বাংলাদেশ

সত্যায়িত করার ক্ষেত্রে কিভাবে দূর্ভোগ এড়াতে হয়?

দেশে লাখ লাখ চাকরি প্রার্থী রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত চাকরির আবেদন করার জন্য ছবি ও কাগজপত্র সহ সত্যায়িত করতে সরকার নির্ধারিত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের পিছনে ছোটাছুটি করেন।

এক্ষেত্রে কখনো কখনো তারা সীমাহীন দুর্ভোগের স্বীকার হন। 

শুধু চাকরিই নয়, দেশে শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় সব নাগরিককে বিদেশে লেখাপড়া,পাসপোর্ট আবেদন, বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র বাধ্যতামূলক ভাবে সত্যায়িত করতে হয়।

সরকার নির্ধারিত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার কাছে সত্যায়িত করতে গেলে ওই কর্মকর্তার ব্যস্ততার মাঝে এই সত্যায়িতকে রীতিমত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হয়।

অনেক সময় এই সরকারি কর্মকর্তার কটূ কথা বা বাজে ব্যবহারও হজম করতে হয়। 

এছাড়াও অনেকেই আবার সত্যায়নের জন্য বিশেষ সম্মানি দাবি করেন।

এসব ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়ে অনেকেই ভুয়া “সত্যায়িত” সীল বানিয়ে জালসই দিয়ে নিজেই নিজের কাগজপত্র সত্যায়িত করেন। 

ডিজিটাল যুগে আবার সত্যায়িত কেন?

অনেকের মাঝে এই প্রশ্নটি আসতে পারে যে, “ডিজিটাল যুগে সত্যায়িত কেন”?

আসলে এটি অনেক আগে থেকেই এভাবেই আসছে বলে এই নিয়ম পরিবর্তন করা হচ্ছে না।

তবে সত্যায়ন প্রার্থীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সত্যায়ন বিষয়ে সরকারের উচিৎ সহজ ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এতে চাকরিপ্রার্থীরা অন্তত বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাবেন। 

সত্যায়িত মানে কি? সত্যায়ন কেন করা হয় FAQS

সত্যায়িত মানে কি?

সরকারি চাকরি অথবা অন্য কোন কাজের জন্য নির্ধারিত অফিসে আপনার দাখিলকৃত ডকুমেন্ট সত্যি কিনা অথবা আসল ডকুমেন্টের অনুলিপি কিনা সেটা একজন সাইন করে সাক্ষ্য দেবেন এবং ব্যক্তিটি এমন কেউ হবেন যার সাক্ষ্য বিশ্বাস করার যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। একেই সত্যায়িত বলা হয়ে থাকে।

সত্যায়িত কাগজের মেয়াদ কতদিন?

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সত্যায়িত বিষয়ে তেমন কোন আপডেট তবে অনেকের মতে সত্যায়িত কাগজের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস।

সত্যায়িত ছবি মানে কি?

ছবি সত্যায়ন করাতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে ছবিতে স্বাক্ষর নেয়া হয়। সত্যায়িত ছবি মানে হচ্ছে স্বাক্ষর দিয়ে সত্যায়ন করা ছবি।

আরও পড়ুনঃ

ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন? । বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

থাইরয়েড কি খেলে ভালো হয় । থাইরয়েড রোগের লক্ষণ কি?

কম দামে ভালো ফোন বাংলাদেশ

শেষ কথা

আশা করছি আপনি সত্যায়িত মানে কি আরটিকেলটি শেষ পর্যন্ত পরেছেন।

যদি পরে থাকেন তাহলে আপনার এই বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না। 

তারপরও যদি আপনার কোনো মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন। 

সব বিষয়ে নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট।

আমরা আপনাদেরকে আপনাদের সুবিধার্থে  –

অনলাইন থেকে ঘরে বসে টাকা আয়

টেলিকম অফার, ইন্টারনেট অফার এবং ব্লগিং টিপস সহ নানান ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলগুলো প্রদান করে থাকি।

জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। 

আরও পড়ুনঃ

ঘরে বসে মোবাইলে আয়

ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

Leave a Comment