জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত 2025 কত টাকা? জানা না থাকলে জমি দলিল করার খরচ সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন। বাংলাদেশে জমি কেনা বা দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রেজিস্ট্রেশন খরচ।
অনেকেই ভাবেন জমির দামই আসল খরচ, কিন্তু বাস্তবে দলিল করতে গেলে আরও নানা ফি, কর ও শুল্ক দিতে হয়। ২০২৫ সালের জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত তা জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি বাংলাদেশে জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত 2025 এবং কিভাবে আপনি নিয়ম মেনে কম খরচে জমি দলিল করতে পারেন।
Content Summary
জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত 2025 । জমি দলিল করতে কত টাকা লাগে

জমি দলিল করার সময় কয়েকটি ধাপে খরচ হয়। এর মধ্যে প্রধান হলো—
- রেজিস্ট্রেশন ফি: দলিলে উল্লেখিত মোট মূল্যের ১%।
- স্ট্যাম্প শুল্ক: মোট মূল্যের ১.৫%।
- স্থানীয় সরকার কর: সাধারণ এলাকায় ৩%, তবে সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ২%।
- উৎসে আয়কর (53H):
- ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ইত্যাদি বড় জেলা বা সিটি এলাকায় ৬%
- অন্যান্য পৌর এলাকায় ৪%
- গ্রামীণ এলাকায় ২%
এই করগুলোর বাইরে আরও কিছু অতিরিক্ত ফি দিতে হয় যেমন —
- ই-ফি: ১০০ টাকা
- এন-ফি: প্রতি পৃষ্ঠায় ২৪ টাকা
- নকলনবিশ ফি (NN Fee): প্রতি পৃষ্ঠায় ৩৬ টাকা
- হলফনামা: ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে
- কোর্ট ফি: ১০ টাকা
আরও পড়ুনঃ জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে
জমি দলিলের খরচ কিভাবে নির্ধারণ করা হয়
জমির দলিলের খরচ নির্ভর করে জমির অবস্থান, দাম এবং শ্রেণি (আবাসিক, বাণিজ্যিক, বা শিল্প এলাকা) অনুযায়ী।
উদাহরণস্বরূপ —
- ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় জমির দামের উপর ভিত্তি করে কর ও ফি তুলনামূলক বেশি।
- পৌরসভা ও গ্রামীণ এলাকায় ফি কম হয়, কারণ এখানে জমির মূল্যও কম ধরা হয়।
- যদি রিয়েল এস্টেট বা ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি জমি বিক্রি করে, তবে আলাদা কর প্রযোজ্য হয় (৫৩FF ধারা অনুযায়ী)।
এ ছাড়া জমির দলিলের সময় ভ্যাট (VAT) দিতে হয়, যা সাধারণত—
- প্লট বা জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ২%
- ফ্ল্যাট বা ভবনের ক্ষেত্রে আয়তন অনুযায়ী ২% থেকে ৪.৫% পর্যন্ত।
নাবালকের নামে জমি দলিল করার নিয়ম
নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের নামে জমি দলিল করা যায়, তবে এতে কিছু বিশেষ শর্ত মানতে হয়।
- নাবালকের অভিভাবক (পিতা বা মাতা) তার পক্ষে দলিল করবেন।
- দলিলের মধ্যে স্পষ্টভাবে লিখতে হবে যে নাবালক প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।
- অভিভাবকের আইনি হলফনামা সংযুক্ত করতে হয়।
এক্ষেত্রে সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি একই থাকে, তবে প্রক্রিয়াটি একটু সময়সাপেক্ষ।
আরও পড়ুনঃ জমির মালিকানা বের করার উপায় অনলাইনে
জমি দলিলের খরচ ২০২৫ সারাংশ
খরচের ধরন | শতাংশ বা পরিমাণ | মন্তব্য |
---|---|---|
রেজিস্ট্রেশন ফি | ১% | মোট দলিলমূল্যের ওপর |
স্ট্যাম্প শুল্ক | ১.৫% | বাধ্যতামূলক |
স্থানীয় সরকার কর | ২%-৩% | এলাকায় ভেদে |
উৎসে আয়কর (53H) | ২%-৬% | অবস্থানভেদে |
ভ্যাট (VAT) | ২%-৪.৫% | আয়তন ও ধরণভেদে |
ই-ফি | ১০০ টাকা | নির্ধারিত হার |
এন-ফি | ২৪ টাকা প্রতি পৃষ্ঠা | রেজিস্ট্রি অফিসে জমা |
নকলনবিশ ফি | ৩৬ টাকা প্রতি পৃষ্ঠা | অফিসে পরিশোধযোগ্য |
হলফনামা | ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প | দলিলের সঙ্গে |
কোর্ট ফি | ১০ টাকা | আবেদনপত্রে সংযুক্ত |
জমির ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
সব ফি ও কর স্থানীয় সোনালী ব্যাংক বা NRBC ব্যাংক বুথে জমা দিতে হয়।
সাধারণত,
- রেজিস্ট্রেশন ফি, ই-ফি, এন-ফি একসাথে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।
- স্ট্যাম্প শুল্কের জন্য আলাদা পে-অর্ডার করতে হয়।
- স্থানীয় সরকার কর সাধারণত NRBC ব্যাংকের বুথে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ জমির দলিল বের করার নিয়ম কি?
১ কাঠা জমির রেজিস্ট্রি খরচ কত টাকা (২০২৫ অনুযায়ী)
জমির রেজিস্ট্রি খরচ নির্ভর করে জমির মূল্য, অবস্থান (শহর না গ্রাম), এবং সরকারি নির্ধারিত গাইডলাইন মূল্যের উপর।
নিচে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলোঃ-
খরচের ধরন | আনুমানিক হার | ১ কাঠা জমির উদাহরণমূলক খরচ (টাকা) |
---|---|---|
স্ট্যাম্প শুল্ক | ৩% | ১৫,০০০ |
রেজিস্ট্রেশন ফি | ২% | ১০,০০০ |
স্থানীয় সরকার কর (মিউনিসিপ্যাল/সিটি কর) | ১% | ৫,০০০ |
মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) | ১.৫% | ৭,৫০০ |
দলিল লেখার ফি ও অন্যান্য খরচ | নির্দিষ্ট নয় | ৩,০০০–৫,০০০ |
৩ কাঠা জমি রেজিস্ট্রির করতে মোট আনুমানিক খরচ কত টাকা? জমির দামের উপর নির্ভর করে ৩৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে প্রতি কাঠা জমির রেজিস্ট্রির জন্য (যদি প্রতি কাঠা মূল্য ৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়)।
উদাহরণস্বরূপঃ –
যদি ১ কাঠা জমির মূল্য হয় ৫ লক্ষ টাকা, তাহলে মোট খরচের হিসাব এমন হতে পারে:
- (৫,০০,০০০ × ৭.৫%) = ৩৭,৫০০ টাকা (গড় রেজিস্ট্রি খরচ)
- সাথে দলিল লেখার ফি ও নোটারি খরচ যোগ করে মোট আনুমানিক ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
৩ কাঠা জমির রেজিস্ট্রি খরচ কত টাকা ২০২৫
ইতিপূর্বে আপনাদের বলা হয়েছে যে জমির রেজিস্ট্রেশন খরচ নির্ভর করে জমির মূল্য, অবস্থান (শহর বা গ্রাম), এবং সরকারি গাইডলাইন মূল্য অনুযায়ী।
তবে ২০২৫ সালের হিসাব ধরে নিচের মতো একটা ধারণা দেওয়া যায়।
ধরা যাক, প্রতি কাঠা জমির মূল্য ৫ লক্ষ টাকা। তাহলে ৩ কাঠা জমির মোট মূল্য হবে ১৫ লক্ষ টাকা।
খরচের ধরন | আনুমানিক হার | হিসাব (১৫ লক্ষ টাকার ওপর) | আনুমানিক পরিমাণ (টাকা) |
---|---|---|---|
স্ট্যাম্প শুল্ক | ৩% | ১৫,০০,০০০ × ৩% | ৪৫,০০০ |
রেজিস্ট্রেশন ফি | ২% | ১৫,০০,০০০ × ২% | ৩০,০০০ |
স্থানীয় সরকার কর (সিটি/ইউনিয়ন ট্যাক্স) | ১% | ১৫,০০,০০০ × ১% | ১৫,০০০ |
ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) | ১.৫% | ১৫,০০,০০০ × ১.৫% | ২২,৫০০ |
দলিল লেখার ফি, নোটারি ও অন্যান্য খরচ | নির্দিষ্ট নয় | – | ৫,০০০–৭,০০০ |
মোট আনুমানিক খরচ:
১,১৭,৫০০ থেকে ১,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে ৩ কাঠা জমির রেজিস্ট্রির জন্য (যদি প্রতি কাঠা মূল্য ৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়)।
যদি জমির মূল্য বেশি হয়?
যদি প্রতি কাঠা জমির মূল্য হয় ১০ লক্ষ টাকা, তাহলে একই হারে ৩ কাঠা জমির রেজিস্ট্রেশন খরচ দাঁড়াবে প্রায় ২,৩৫,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প শুল্ক জমা দিতে হয় সোনালী ব্যাংক বা নির্ধারিত ব্যাংকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে।
- সব খরচের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ রেজিস্ট্রি অফিসে তা দেখাতে হয়।
- অনলাইনে জমির গাইডলাইন মূল্য দেখা যাবে https://www.minland.gov.bd সাইটে।
আরও পড়ুনঃ জমির নকশা কোথায় পাওয়া যায়? অনলাইনে জমির নকশা দেখা
FAQs – জমি দলিল করার নিয়ম 2025
জমির দামের উপর নির্ভর করে খরচ ভিন্ন হয়। সাধারণত মোট দলিলমূল্যের ৮% থেকে ১২% পর্যন্ত খরচ হয় (রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প, কর ও ভ্যাটসহ)।
রেজিস্ট্রেশন ফি স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিতে হয়, সাধারণত সোনালী ব্যাংক বা NRBC ব্যাংক বুথে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
হ্যাঁ, অবশ্যই। দলিলের খসড়া লিখে নোটারি পাবলিকের সিলসহ জমা দিতে হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যাচাই করা হয়।
হ্যাঁ, এখন https://www.minland.gov.bd/ ওয়েবসাইটে জমির ধরন, এলাকা ও মূল্য অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প শুল্ক দেখা যায়।
সাধারণত না। শুধু হলফনামা ও অভিভাবকের কাগজপত্রের খরচ যুক্ত হয়, যা আনুমানিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
উপসংহার
জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত 2025 জানতে পেরেছেন বলে মনে করি। ২০২৫ সালে জমি রেজিস্ট্রির খরচ কিছুটা বেড়েছে, তবে প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে।
এখন অনলাইনে দলিল যাচাই, কর পরিশোধ ও দলিলের খসড়া প্রস্তুত করা যায়। জমি কেনার আগে অবশ্যই উপযুক্ত দলিল মূল্য নির্ধারণ করে খরচের হিসাব জেনে নিন।
জমির দলিল সংক্রান্ত এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে অবশ্যই একটি কমেন্ট করুন। সেই সাথে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুকে।
ভিজিট করুন 👉
━ ━ ━ ━ ━ ━ ━ ━
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।