এশার নামাজ কয় রাকাত ও কি কি এবং কিভাবে পড়তে হয়, পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে অনেকেই গুগল সার্চ করে থাকেন। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একজন মুসলমানকে গুরুত্ব সহকারে পড়তে হয়। তারমধ্যে দিনের শুরুতে ফজরের নামাজ এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে এশার নামাজ পড়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে আজ আমরা আপনাদের বর্ণনা করব এশার নামাজ কয় রাকাত এর নিয়ত ও পড়ার নিয়ম সম্পর্কে।
এশার নামাজ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণনা রয়েছে “যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬)
এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে এশার নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে আপনার কোনো দ্বিধা থাকবে না বলে মনে করি।
সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর জন্য এশার নামাজ ফরজ। তবে পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে এশার নামাজের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এসকল বিষয় জানতে সম্পূর্ন পোস্ট পড়ুন।
Content Summary
এশার নামাজ কয় রাকাত ও কি কি? এশার নামাজের নিয়ম
হাদিস অনুসারে এশার ফরজ নামাজ ৪ রাকাত, যা সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে আবশ্যিক পড়ার জন্য বলা হয়েছে।
ফরজ নামাজ পড়ার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত ও ফরজ নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সহ এশার নামাজ সর্বমোট ১০ রাকাত।
এখন অনেকের মধ্যেই দ্বিধা রয়েছে যে এশার নামাজ ১৫ রাকাত। তবে কীভাবে এশার নামাজ কয় রাকাত এই বিষয়টিও আপনাদের সামনে পরিষ্কার করব এবং কেন লোকেরা এমনটি মনে করেন তা বুজতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট এখন কোথায়?
এশার ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ
আমরা সবাই কম বেশি জানি এশার ফরজ নামাযের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে। তবে এটা ঐচ্ছিক নামাজ। পড়লে সওয়াব রয়েছে এবং না পড়লে কোন ধরনের গুনাহ হবে না।
এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ
৪ রাকাত ফরজ অংশটি ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করতে হয়, তবে একান্তই কোনো অসুবিধা থাকলে নিজে নিজে পড়ে নেয়া যায় যেকোনো স্থানে।
তবে জামাতে এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে পাড়লে সাতাশ গুন বেশি সওয়াব দেয়া হবে বলে হাদিসে উল্লেখিত আছে।
এশার ২ রাকাত সুন্নত নামাজ
জামাত ৪ রাকাত ফরজ নামাজের পর, ২ রাকাত এশার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাজ রয়েছে। এই দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ পড়া আবশ্যক।
মূলত এশার ফরজ নামাজ ৪ রাকাত, ফরজের পূর্বে সুন্নত ৪ রাকাত এবং ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ সহ এশার নামাজ সর্বমোট ১০ রাকাত।
এই দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজ জীবদ্দশায় কখনো ছাড়েননি, তাই আমাদেরও ছাড়া উচিত নয়।
দুই রাকাত নফল নামাজ
এশার নামাজে পরবর্তী অনেকেই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকেন। নফল নামাজ নিজে একটি নামাজ এবং এই নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় উল্লেখ করা নেই।
শুধুমাত্র মাকরুহ সময় ব্যতীত আপনি যেকোন সময় নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
তাই এই নামাজকে কোনোভাবেই এশার নামাজের সাথে যুক্ত করা যায় না।
এই দুই রাকাত নফল নামাজ কে অনেকেই এশার নামাজের সাথে যুক্ত করে হিসাব করে থাকেন।
এশার নামাজের সাথে বেতর নামাজ আদায়
আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এশার নামাজের পরপরই ৩ রাকাত বেতের নামাজ আদায় করে থাকেন।
তবে হাদীসে পাওয়া যায় বেতের নামাজ নিজে একটি নামাজ, এশার নামাজের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
এটি পড়ার নির্দেশ মূলত রাতের শেষ প্রহরে উঠে তাহাজ্জুদ নামাযের পর পড়া উত্তম।
যারা শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না বা অন্য কোন সমস্যা এয়ছে তারা এশার নামাজের পর পরই এই বেতের নামায আদায় করতে পারবেন।
হাদিস অনুসারে বিতরের নামাজ এক রাকাত, তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত, ৭ রাকাত পড়া যায়।
তাই আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন বেতের নামাজও এশার নামাজের অংশ নয়।
আরও পড়ুনঃ
কারবালা কোথায় অবস্থিত? কারবালার ইতিহাস
আসলে এশার নামাজ কত রাকাত? এশার নামাজের নিয়ম
এতক্ষণ আলোচনা পর আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এশার নামাজ কত রাকাত?
মূলত সার্বিক বিবেচনায় নফল ও বেতার নামাজকে এশার নামাজ থেকে দুটি ভিন্ন ভিন্ন নামাজ বলে হাদীসে উল্লেখিত রয়েছে।
তাই এশার ফরজ নামাজ হচ্ছে ৪ রাকাত। এবং সুন্নত নামাজ সহ এশার নামাজ ১০ রাকাত।
এশার নামাজের সময় শুরু ও শেষ
দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ টি হচ্ছে সর্বশেষ নামাজ। দিনের চতুর্থ নামাজ আদায় করার পরপরই এশার নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়।
আমারা জানি দিনের শেষ নামাজ হচ্ছে এশার নামাজ। এশার নামাজের শেষ সময় মধ্যরাত পর্যন্ত।
তবে যদি কোন কারনে নির্ধারিত সময়ে এশার নামাজ পড়া সম্ভব না হয় তবে ফজরের সময় শুরুর পূর্বে পর্যন্ত এশার নামাজ পড়া যায়।
তবে রাত্রের প্রথম দুই ভাগের মধ্যে (মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর) এশার নামাজ পড়ে নেওয়া উত্তম।
কেননা রাত্রের তৃতীয় ভাগ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ফজর নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়।
তবে মুসাফির অবস্থায় থাকলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী এশার চার রাকাত ফজরের নামাজ সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত আদায় করার নির্দেশ রয়েছে।
তারপর মুসাফির শুধুমাত্র বিতরের নামাজ আদায় করবেন।
এশার নামাজ ১৭ রাকাত কি কি? এটি সম্পূর্ণ ভুল
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা তর্কে জড়ান এশার নামাজ ১৭ রাকাত কি কি এই বিষয়টি নিয়ে।
- আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি নফল নামাজ এশার নামাজের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা নফল নামাজ আপনি দিনের যেকোনো সময় পড়তে পারেন।
- আমি তাদেরকে বলতে চাই বেতের নামাজ কোনভাবেই এশার নামাজের অন্তর্ভুক্ত নয়।
যারা এশার নামাজ ১৭ রাকাত বলে হিসাব করে থাকেন তাদের হিসাব দিয়ে মূলত এই রকম
- এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ ( ঐচ্ছিক)
- এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ ( আবশ্যিক)
- এশারের দুই রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদাহ নামাজ ( আবশ্যিক)
- দুই রাকাত নফল নামাজ ( ঐচ্ছিক)
- তিন রাকাত বেতের নামাজ। ( আবশ্যিক, তবে এশার নামাজের অংশ নয়)
- সব শেষে পুনরায় দুই রাকাত নফল নামাজ। ( ঐচ্ছিক)
অর্থাৎ যারা এশার নামাজ ১৭ রাকাত হিসাব করেন তাদের হিসাব মতে ( ৪+৪+২+৩+২=১৭ রাকাত।)
এশার নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু হয়?
আমরা সকলেই জানি এশার নামাজ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সর্বশেষ নামাজ।
দীনের চতুর্থ নামাজের ওয়াক্ত সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই শুরু হয় তার নাম হচ্ছে মাগরিবের নামাজ।
মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পরপরই এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।
এশার নামাজ পড়ার নিয়ম – এশার নামাজের রাকাত সমূহ
দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে প্রতিটি নামাজেই ঐচ্ছিক এবং আবশ্যিক নামাজ নামে ভিন্ন ভিন্ন অংশ রয়েছে।
আপনার হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় থাকলে আপনি সকল নামাজ পড়তে পারেন কোন সমস্যা নাই।
হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যদি কোন ব্যক্তি সময়ের অভাবে ঐচ্ছিক নামাজ গুলোপড়তে না পারে তবে তাকে গুনাগার হিসাবে গণ্য করা।
যদি সে নামাজ গুলি পড়তে পারে তবে তার জন্য তাকে সওয়াব বা নেকি প্রদান করা হবে।
তাই আপনার হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় থাকলে এশার নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করুন, তারপর জামাতের সাথে চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করুন, তারপর দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজ আদায় করে অন্যান্য নামাজগুলো পড়ুন।
এশার নামাজের নিয়ত
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত হচ্ছে “নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি ফারজুল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
আরও পড়ুনঃ
গণসংবর্ধনা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
বঙ্গবন্ধু দ্বীপ কোথায় অবস্থিত?
এশার নামাজ কত রাকাত – How many rakats is the Isha prayer?
সাধারণত এশার নামাজ ১০ রাকাত পড়া হয়। চার রাকাত সুন্নত ফরজের পূর্বে (ঐচ্ছিক), চার রাকাত ফরজ (আবশ্যিক), ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
যাবে। তবে রাত ১২টার পূর্বে এশার নামাজ পড়া উত্তম।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পঞ্চম ওয়াক্ত হচ্ছে এশা। এই এশার নামাজ আবশ্যিক পড়তে হয় ৬ রাকাত, তবে বেশিরভাগ নামাজি এশার নামাজের সাথে নফল নামাজ ও বেতের নামাজ আদায় করে নেন।
এশার নামাজ মোট ১০ রাকাত, নামাজের ধরন হচ্ছে ৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
উপসংহার,
আশা করি আপনি এশার নামাজ কয় রাকাত ও কি কি এই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ইন্টারনেট ঘুরলে আপনি আরও অনেক তথ্য পাবেন তবে আপনাদেরকে সঠিক তথ্য প্রদানের চেষ্টা করেছি।
এশার ফরজ নামাজ চার রাকাত এবং মোট ১০ রাকাত, এই বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তবে আমাদের কমেন্ট করে জানান।
ইন্টারনেট থেকে টাকা আয়, ব্লগিং ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং ও নামাজ সম্পর্কিত তথ্য জানতে রেগুলার ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট।
এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
আরও পড়ুনঃ
ভাষার মূল উপকরণ কি? ভাষার মূল উপাদান কি?
বাংলাদেশের পতাকা প্রথম কোথায় উত্তোলন হয়?
১ কুইন্টাল সমান কত কেজি? কুইন্টাল কি?
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।