৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব – 7th March Speech In Bangla

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব কি? বাংলার ইতিহাসে Importance Of 7th March Speech সম্পর্কে আজকে আপনাদের জানাবো। প্রিয় পাঠক বৃন্দ ৭ ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে আপনারা অনেকেই গুগল সার্চ করে থাকেন। Bangabandhu 7th march speech in bengali সম্পর্কে আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ইতিমধ্যে অনেকেই জানেন ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সম্পর্কে। নতুন প্রজন্মকে জানা দরকার ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আহ্বান করেন।

এই ৭ই মার্চের ভাষণের সকল তথ্যগুলো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরব। অবশ্যই ৭ ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। 

Contents In Brief

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব কি? The Importance Of 7th March Speech

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব কি
৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব কি

১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ থেকে ভাগ হয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এবং তখন বাংলাদেশর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান।

সে সময় পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল এবং বাংলাদেশের ওপর নানান ধরনের জুলুম নির্যাতন চালিয়েছিল।

এককথায় বলা যায় পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ কে শোষন করছিল।

মূলত পশ্চিম পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের উপর দ্বৈত নীতির কারণে বাংলার জনগণের দেয়ালে পিট ঠেকে যায় তারা পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হতে ব্যকুল ছিল।

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে হাজার বছরের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেসময় বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং স্বাধীনতার জন্য একত্রিত করার উদ্দেশ্য ছিল মূল উদ্দেশ্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে উজ্জীবিত করেন এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে এক বিন্দু পিছিয়ে যায়নি বাঙালি জাতি বরং স্বাধীনতা অর্জন করতে এ দেশের ৩০ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়।

এখনো পর্যন্ত পুরো বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা বিরল বললেই চলে। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এর আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্মবোধ, নিজের দেশকে বাঁচানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্থির থাকা।

এছাড়াও একজন নেতা হিসেবে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা এবং জাতিকে পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চ জনের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ এবং নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করা।

আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন এই ভাষণ দিয়েছিলেন তখন আরও একটি উল্লেখযোগ্য যোগ্য দিক ছিল তার কাব্যিক গুণ-শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস, যা হয়ে ওঠে গীতিময় ও চতুর্দিকে অনুরণিত।

কেন ৭ ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় এবং কেনই বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হাজার বছরের নেতা বলা হয়? তা আপনি 7th march speech paragraph পড়লে জানতে পারবেন।

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে অবশ্যই আপনারা ৭ ই মার্চের ভাষণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

ডিসকাউন্টে সকল সিমের মিনিট, ইন্টারনেট ও বান্ডেল অফার
ক্রয় করতে DESH OFFER সাইটে ভিজিট করুন।

৭ই মার্চ কি দিবস? – 7 March Ki Dibos

৭ই মার্চ কি দিবস
৭ই মার্চ কি দিবস

২০২০ সালের ২৫ শে মার্চ ৭ই মার্চকে একটি জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল হাইকোর্ট।

মূলত ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে এবং বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ভাষণ দিয়েছিলেন।

সেদিনের সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানে হানাদার বাহিনীরা বাঙালি জাতির ওপর নির্মম অত্যাচার এবং নিপীড়ন চালাতে থাকে সেসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণের পর বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনেকটাই উজ্জীবিত হয় এবং এদেশকে বাঁচাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে রাতে বাঙালির ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। সেই রাতেই বাঙালির উদ্দেশ্যে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন।

এরপর পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করেছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীরা। তাকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের নিয়ে কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল।

তবে ৭ ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনেকটাই উদ্বুদ্ধ করেছে এবং উজ্জীবিত করেছে এ দেশকে বাঁচানোর জন্য।

ডিসকাউন্টে সকল সিমের মিনিট, ইন্টারনেট ও বান্ডেল অফার
ক্রয় করতে DESH OFFER সাইটে ভিজিট করুন।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি স্বাধীন দেশ এবং পৃথিবীর মাঝে এ দেশ ধীরে ধীরে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠছে।

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য – 7 March Speech In Bangla

আমরা জানি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নেতারা নেতৃত্বের মাধ্যমে ভাষণ কিংবা বক্তব্য প্রদান করেছেন।

জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে যে সকল ভাষণ গুলো দেয়া হয় সে সকল ভাষণ গুলোর প্রাধান্য কিংবা গুরুত্ব এতটা থাকে না, যতটা গুরুত্ব এবং তাৎপর্য রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের।

যে ভাষণে একটি জাতি দিকনির্দেশনা পায় এবং জাতীয়তাবাদী আদর্শ স্বতন্ত্র ও জাতিসত্তা বিনির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হয় সে ভাষণ অবশ্যই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে।

এছাড়াও ৭ই মার্চের ভাষণ হচ্ছে এমন একটি ভাষণ যে ভাষণে রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল বাঙালি জাতি। রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে এনেছে বিশ্বের মানচিত্রে।

মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এ ধরনের ভাষণ অনেকটাই ব্যতিক্রমী ভাষণ হিসেবে বিবেচিত। এজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এই ভাষণটি বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য।

বঙ্গবন্ধুর পরিশ্রমী সেই নেতৃত্ব এবং অপরিশ্রম তার সকল চিন্তাভাবনার কারণেই বাঙালি জাতীয় ঐক্যবদ্ধ হতে সক্ষমতা পায় এবং এই ভাষণের মাধ্যমে একটি ব্যতিক্রমী বাংলাদেশকে দেখেছিল পুরো বিশ্ব।

এ ভাষণ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সকল বৃদ্ধ বণিতাকে এক পতাকাতলে সমবেত করে, এই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষণ ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ – ৭ই মার্চের বক্তব্য – The historic speech of 7th march paragraph

The historic speech of 7th march paragraph
The historic speech of 7th march paragraph

আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন।

আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে।

আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন।

আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করব এবং এই দেশকে আমরা গড়ে তুলব, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।

বঙ্গবন্ধু ভাষণের শুরুতেই বাংলার করুন ইতিহাস তুলে ধরেন-

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তেইশ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। তেইশ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর–নারীর আর্তনাদের ইতিহাস; বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।

১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে দশ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম।

তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি।

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন

আমি, শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।

তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসব।

আমি বললাম, অ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব; এমনকি আমি এ পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজনও যদি সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।

জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন যে আলোচনার দরজা বন্ধ না, আরও আলোচনা হবে।

তারপর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করলাম, আপনারা আসুন বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করি।

তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসেন, তাহলে কসাইখানা হবে অ্যাসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হবে।

যদি কেউ অ্যাসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, অ্যাসেম্বলি চলবে। তারপর হঠাৎ ১ তারিখে অ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসাবে অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে, আমি যাব।

ভুট্টো সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো। দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্দুকের মুখে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল।

আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সবকিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো।

মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্

কী পেলাম আমরা? যে আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী আর্ত মানুষের বিরুদ্ধে, তার বুকের উপর হচ্ছে গুলি।

আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি, তখনই তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

টেলিফোনে আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তাঁকে আমি বলেছিলাম, জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের উপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে।

আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।

কিসের বৈঠক বসবে, কার সঙ্গে বসব?

আমি বলেছি, কিসের বৈঠক বসবে, কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে, তাদের সঙ্গে বসব? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, সমস্ত দোষ তিনি আমার উপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের উপর দিয়েছেন।

ভাইয়েরা আমার, ২৫ তারিখে অ্যাসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি যে ওই শহীদের রক্তের উপর পা দিয়ে কিছুতেই মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না।

অ্যাসেম্বলি কল করেছে। আমার দাবি মানতে হবে: প্রথম, সামরিক আইন মার্শাল ল উইথ ড্র করতে হবে, সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে, আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে ।

তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না।

আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে; শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেণ্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না।

কর্মচারীরা বেতন সম্পর্কে

২৮ তারিখে কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।

তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।

তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।

আমাদের দমাতে পারবে না

আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।

আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব।

যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাঁদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন।

সরকারি কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা

সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না। মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে।

এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে।

আমাদের যেন বদনাম না হয়। মনে রাখবেন রেডিও টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনেন, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবেন না।

যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোনো বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নিবার পারে।

কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে চালাবেন। কিন্তু যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে–শুনে কাজ করবেন।

সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা

প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব।

এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

জয় বাংলা।

৭ই মার্চ ও মুক্তিযুদ্ধ – বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব

স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি।

মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌমবাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তীতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছে দেয়।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীণ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিকাল ৩.২০ মিনিটে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে ১৮ মিনিটব্যাপী যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

৭ই মার্চের ভাষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – ৭ই মার্চের ভাষণের বৈশিষ্ট্য

৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ভাষণের সময়৭ মার্চ, ১৯৭১, রবিবার (বিকেল ৩ টা)
ভাষণের স্থানঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
মোট সময় রেকর্ড হয়েছে১৮ মিনিট
বঙ্গবন্ধুকে যারা ঘিরে রেখেছিলসিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আব্দুর রব ও মহিউদ্দিন।
সভার প্রধান অতিথি ও সভাপতিকেউ ছিলেন না।
সভার বক্তা ছিলেন১ জন (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)
ভাষণের শুরুর বাক্য“ভায়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাসের সামনে হাজির হয়েছি”
শেষ বাক্য“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা”
মার্কিন নিউজউইক ম্যাগাজিন বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে৫ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে।
UNESCO ৭-ই মার্চের ভাষণকে Memory of the World Register এ স্থান পায়২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর
‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’২০০২ সাল থেকে
৭ই মার্চের ভাষণের বৈশিষ্ট্য

আরও পড়ুনঃ

শেখ রাসেলের কবর কোথায়?

তারাবির নামাজের দোয়া কখন পড়তে হয়?

জিমেইল আইডি কিভাবে খুলবো?

৭ই মার্চ কি সরকারি ছুটি?

হাঁ, ৭ই মার্চ বাংলাদশে সরকারি ছুটি পালন করা হয়।

৭ই মার্চ কি দিবস?

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে ২০০০ সালে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ৭ই মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

৭ই মার্চের ভাষণ কে দিয়েছিলেন?

৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেসের জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকালে পাকিস্তানে যে আন্দোলন চলছিল তা হলো?

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকালে পাকিস্তানে যে আন্দোলন চলছিল তা হলো পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন।

উপসংহার 

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের এই আর্টিকেলে ৭ ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব এবং ৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

আশা করছি ৭ ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব সম্পর্কে আপনারা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।

আপনি যদি ৭ই মার্চের ভাষণ লিখিত pdf download করতে চান, তবে এখান থেকে তা করতে পারেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ download করুন এখানে।

আপনাদের যদি আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগে এবং আপনারা যদি আজকের এই আর্টিকেল সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত সকল আর্টিকেলগুলো পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়তই আপনাদের সাথে নতুন নতুন আর্টিকেল গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি।

তাই অবশ্যই ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট এবং জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।

অনলাইন থেকে ঘরে বসে ইনকাম করা সম্ভব সে বিষয়ে অবশ্যই আপনাদের জানা উচিত,

এবং

এই সকল বিষয়গুলো আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরেছি।

এছাড়াও আমাদের ওয়েবসাইটের সকল আর্টিকেলগুলো এবং এর পাশাপাশি সকল আপডেটগুলো পেতে হলে আমাদের সাথে থাকুন।

সেই সাথে আমাদেরও এ সম্পর্কিত সকল আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজটি তে।

আরও পড়ুনঃ

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

বাংলাদেশ সম্পর্কে ৫ টি বাক্য

WWW এর পূর্ণরূপ কি?

কমদামে মিনিট, ইন্টারনেট ও বান্ডেল অফার কিনতে ভিজিট করুনঃ এখানে ক্লিক করুন
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।

Leave a Comment