মানুষ কবিতার মূলভাব সম্পর্কে আপনারা অনেকেই গুগল সার্চ করে থাকেন। প্রিয় পাঠকগণ আজকে আমরা আর্টিকেল এর মাধ্যমে মানুষ কবিতার মূলভাব সম্পর্কে জানব।
আসলে বর্তমান সময়ে অনলাইনের যোগ হওয়ায় আমরা প্রায় সকল কিছুই অনলাইন থেকে জানতে চাই। আমাদের এই ওয়েবসাইটে আমরা সকল বিষয়ের উল্লেখ করে থাকি।
আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সম্পূর্ণভাবে পড়লে মানুষ কবিতার মূলভাব কি এবং মানুষ কবিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পারব। তাই পুরোপুরি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
Content Summary
মানুষ কবিতার মূলভাব
মানুষ কবিতা হল একটি সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ এক এবং অভিন্ন জাতি এই সত্যটি জানান দেয়া।
কবি এখানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি প্রভৃতির বাইরে মানুষের আসল পরিচয় রয়েছে সে সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছেন।
আরও সহজভাবে যদি আমরা বলি বর্তমানে একটি গান রয়েছে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।
মূলত এই গান থেকে যে কথাটি বোঝানো হয়েছে তা হলো সকল ধর্মের বাইরে আমাদের আসল পরিচয় হলো মানুষ।
কবি মানুষ কবিতা ঠিক এ বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছেন।
মানবসেবা এক ধরনের মহান কাজ, ক্ষুধার্তকে সাহায্য করা সব ধর্মে স্বীকৃত রয়েছে।
কিন্তু মানুষ কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি মন্দিরের পূজারী এবং মসজিদের মোল্লা দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে।
সাত দিন না খাওয়া আছে একথা বলে ও সে খাবার প্রার্থনা করেছিল।
তবুও তাকে খাবার দেয়নি। অথচ ৮০ বছর ধরে কোনো প্রার্থনা ছাড়াই আল্লাহর দেয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছে।
মানুষের মর্যাদা, সম্মান, উচ্চাসন সব কিছুই নির্ভর করে সৃষ্টিকর্তার ওপর।
সৃষ্টিকর্তা সবাইকে মর্যাদা, সম্মা্ উচ্চাসন দিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমানে মানুষটাকে ধর্মের নামে জাতের নামে ভিন্ন করে দেখে।
তাদের প্রতিহত করতে সাধারণ মানুষ হাতুড়ি, শাবল নিয়ে একদিন এগিয়ে আসবে।
আর তাতে জগতে মানবতার, সাম্যের, শক্তির, জয়ের নিশান উড়বে।
কাজেই মানুষকে ঘৃণা করে শুধু ধর্মগ্রন্থ পাঠ, ধর্মালয়ের সেবা অযৌক্তিক, অধর্মের নামান্তর।
আরও পড়ুনঃ
মানুষ কবিতার ব্যাখ্যা
»গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
মানুষ কবিতার ব্যাখ্যা
মানুষ কবিতায় কবি সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সকল মানুষকে এক এবং অভিন্ন জাতি হিসেবে বসবাস করে এই সত্যটি প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ এই পৃথিবীতে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মানুষের তুলনায় অন্য কিছুই নেই। ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সবকিছুই মানুষের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। পৃথিবী জুড়ে রয়েছে সকল জাতি হলো মানুষ জাতি।
»‘পূজারী, দুয়ার খােলাে,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলাে!”
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয়।
ব্যাখ্যাঃ
এখানে কবিতায় পূজারী স্বপ্নে দেখল তাকে যেন কে বলছে তার দরজায় ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়িয়ে আছে। পূজারী যেন সে দুয়ার খানা খুলে তাকে স্বাগত জানায় এবং তার পূজা করে। সেটি দেখে পূজা রে ভজনালয় খুলতে গেল। আর সে ভাবল স্রষ্ঠার আশীর্বাদে আজ নিশ্চিত রাজা হয়ে যাবে।
» জীর্ণ-বস্ত্ৰ শীৰ্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কষ্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, দ্বার খােলাে বাবা, খাইনি তাে সাত দিন।
সহসা বন্ধ হলাে মন্দির, ভুখারি ফিরিয়া চলে,
তিমিররাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে।
ভুখারি ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তােমার নয়!
ব্যাখ্যাঃ
ছেড়া জামা কাপড় পরা একজন ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক সে ভজনালয় উপস্থিত।
সামনে গিয়ে কাতর স্বরে বলল বাবা দয়া করে দরজা খুলুন আমি সাত দিন ধরে কিছু খাইনি আমাকে কিছু খেতে দিন। তখন হঠাৎই তার দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
ক্ষুদার্থ ভিখারি সেখান থেকে চলে গেল। অন্ধকার পথে সে পথে চলছে। খুদা এসে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়ে। তার পেট জ্বলতে থাকে খুদায়।
বেকারি চিৎকার করে বলে, ওই মন্দির হল পূজারীর কোন দেবতার নয়। নইলে তাকে কেন ফিরিয়ে দেয়া হলো।
» মসজিদে কাল শিরনি আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মােল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,
এমন সময় এলাে মুসাফির গায়ে আজারির চিন
বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন।
ব্যাখ্যাঃ
আগের দিন মসজিদে শিরনি ছিল, সেদিন সেখানে অনেক গোস্ত-রুটি বেঁচে গেছে। তা দেখে মোল্লা সাহেব তো ভীষণ খুশি।
এমন সময় ওই ক্ষুধার্ত মুসাফির তাকে বলল বাবা আমি ক্ষুধার্ত আজ সাতদিন ধরে কিছু খাওয়া হয়নি, আমাকে কিছু খেতে দিন।
» তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মােল্লা- ভ্যালা হলাে দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গাে-ভাগাড়ে গিয়ে নমাজ পড়িস বেটা?
ভুখারি কহিল, ‘না বাবা!’ মােল্লা হাঁকিল– তা হলে শালা
সােজা পথ দেখা’ গােস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা।
ব্যাখ্যাঃ
ক্ষুধার্ত মুসাফিরের কথা শুনে মোল্লা রেগে গেলেন। তিনি রেগে গিয়ে ক্ষুদার্থ মুসাফির ধমক দিয়ে বললেন, ক্ষুধার্ত তো গো ভাগাড়ে গিয়ে মর, এখানে এসেছ কেন। মোল্লা ওই মুসাফির কে প্রশ্ন করল ওই মুসাফির নামাজ পড়ে কিনা। সে বেকারীটি না সূচক উত্তর দেয় মোল্লা আরো বেশি ক্ষুব্দ হয়ে পড়ল। তারপর সে তাকে শালা বলে সম্বোধন করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিল। এবং সকল গোস্ত রুটি নিয়ে মসজিদে তালা মেরে দিল।
» ভুখারি ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তােমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি।
মােল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!
ব্যাখ্যাঃ
ক্ষুদার্থ ভিখারি সেখান থেকেও নিরুপায় হয়ে ফিরে যায়। সেখান থেকে যেতে যেতে সে ভাবতে থাকে, জীবনের ৮০ বছর সময় পার করেছে, কখনো সে তার স্রষ্টা কে ডাকেনি। তাই বলে তো তার স্রষ্টা তার খাবার বন্ধ করে দেয় নি।
তাহলে যে মসজিদ এবং মন্দিরের প্রার্থনা করা হয় সেখানে কি তিনি নেই? তাহলে ওই মসজিদ মন্দির কি শুধু পুরোহিত আর মোল্লার? তারা ওই মসজিদ-মন্দিরে সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বলে কি মানুষ প্রভু সেখানে ঢুকতে পারবে না?
» কোথা চেঙ্গিস, গজনি মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া দ্বার।
খােদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খােলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
মানুষ কবিতার ব্যাখ্যা
মানুষের কল্যাণে সৃষ্টিকর্তার নিয়ম-নীতি পালন করার জন্য যে ঘর তৈরি করা হয়েছে, সে ঘর বন্ধ থাকবে না, জোর করে হলেও তার দরজা খুলে দিতে হবে। সর্বজনীন উপাসনালয়গুলাে মােল্লা-পুরােহিত কুক্ষিগত করেছে।
তারা মসজিদ মন্দির এর দরজায় সব সময় তালা লাগিয়ে রাখে। কবি কবিতার মাধ্যমে মসজিদ এবং মন্দিরের তালা ভেঙে মসজিদ এবং মন্দিরের দরজা খুলে দিতে বলেছে। তিনি বীর সাহসীদের সর্বশক্তি নিয়ে এ বিষয়ে এগিয়ে যেতে বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে অনুপ্রেরণা হিসেবে সতেরােবার ভারতবর্ষ আক্রমণকারী গজনির সুলতান মাহমুদ, বীর চেঙ্গিস খানকে তিনি স্মরণ করেছেন।
যারা পবিত্র উপাসনালয়ের দরজা বন্ধ করে, তাদের ধ্বংসের জন্য কবি দেবালয় ধ্বংসের হােতা কালাপাহাড়কে স্মরণ করেছেন। কবির প্রত্যাশায় এখানে মানুষের জয়গান সূচিত হয়েছে।
»হায় রে ভজনালয়,
তােমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়।
মানুষের জন্য মানুষ
সুপ্রিয় পাঠকগণ মানুষ কবিতার মূলভাব কবি কি প্রকাশ করেছেন তা হয়তোবা এতোক্ষনে আপনারা বুঝেই গেছেন।
তবুও আপনাদের বলছি মানুষ হিসেবে কোনো ধর্ম বা জাতিকে বিচার করা ঠিক নয়। মানুষ মানুষই হয় মানুষ কখনো ধর্ম বাজাতে চেনা যায় না।
মূলত আমাদের সমাজে বর্তমানে নানান বিভেদের কারণেই কবি এসকল বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
যদি আমরা যার ধর্ম, বর্ণ, বিচার করে মানুষকে বিচার করতে যাও তাহলে সমাজের মধ্যে সবসময় বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে থাকবে।
কিন্তু অপর দিকে দেখা গেলে কোন ধর্মই কিন্তু আমাদের শেখায় না সমাজে বিশৃঙ্খলা করা।
সুতরাং মানুষকে সঠিক মর্যাদা প্রদান করা প্রতিটি মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
আরও পড়ুনঃ
বাংলাদেশের পতাকা প্রথম কোথায় উত্তোলন হয়?
গণসংবর্ধনা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর FAQS
এই মানুষ কবিতার মূলভাব হল মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব বোধ। ধর্ম, জাতি, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলে আমরা মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত।
মূলত মানুষ কবিতাটি হল একটি সাম্যবাদী কবিতা।
সৃষ্টিকর্তার নিয়ম-নীতি পালন করার জন্য যে ঘর তৈরি করা হয়েছে, সে ঘর বন্ধ থাকবে না, জোর করে হলেও তার দরজা খুলে দিতে হবে।
উপসংহার
আমরা আজকে মানুষ কবিতার মূলভাব সম্পর্কে জানলাম।
আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লেগেছে। এবং আপনাদের প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়ে গেছেন।
তবুও যদি আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। অনলাইন থেকে ঘরে বসে টাকা এবং নানান শিক্ষামূলক পোস্ট আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে পাবেন।
যদি অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চান তাহলে কিভাবে অনলাইন থেকে টাকা আয় করবেন সে সংক্রান্ত পোস্ট আমাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে। আপনি চাইলে সেসকল আর্টিকেলগুলো পাঠ করতে পারেন।
আমাদের ওয়েব সাইট সম্পর্কিত সকল তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করুন।
ধন্যবাদ।
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।