ইসলাম ধর্ম পালনকারী সকল মুসলমান ইতেকাফ শব্দটির সাথে পরিচিত থাকার কথা। আপনাদের ধারনা আরও স্পষ্ট করতে ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি নামের একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। এমনকি আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জীবনে একবার হলেও ইতেকাফ করেছেন।
কিন্তু অনেকেই ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না। তাই আজকে আমরা জানবো ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত।
আরবী বছরের একটি মাস (রমজান মাসে) মুসলিম জাহানের সকল মুসলমান সাওম পালন করে থাকেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়।
এই সাওম পালনের মাস হলো রমজান মাস। রমজান মাসের ৩০ দিনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- প্রথম ১০ দিনকে রহমতের ১০ দিন বলা হয়।
- দ্বিতীয় দশ দিনকে মাগফেরাতের ১০ দিন বলা হয়।
এবং শেষ দশ দিনকে নাজাতের দশ দিন বলা হয়। সহি হাদিস অনুসারে ইতেকাফ করার সময় হল নাজাতের দশ দিন।
আজকে আমরা জানবো ইতেকাফ কাকে বলে। ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি। জানবো ইতেকাফ কারা করতে পারেন।
এই সাথে এখানে রয়েছে ইতেকাফের সাধারণ কিছু বিধি নিষেধ এবং নিয়মাবলী। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইতেকাফ কাকে বলে কত প্রকার ও কি এই বিষয়ে বিস্তারিত সকল তথ্য।
Content Summary
- 1 ইতেকাফ কাকে বলে? ইতেকাফ কি?
- 2 ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি?
- 3 ইতেকাফের উদ্দেশ্য কি । কি উদ্দেশ্যে ইতেকাফ করা হয়
- 4 ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবার কারণ । কি কি কারণে ইতেকাফ ভেঙ্গে যায়
- 5 মহিলাদের ইতেকাফ করার ইসলামী বিধান সমূহ
- 6 ইতেকাফ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- 7 স্রোতাদের ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি FAQS
- 8 ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি সর্বশেষ
ইতেকাফ কাকে বলে? ইতেকাফ কি?
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ইবাদতের উদ্দেশ্যে ও ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ (আটকিয়ে) রাখাকে ইতেকাফ বলে।
আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের শেষ দশকে নির্দিষ্ট স্থানে ( আমাদের দেশে সাধারণত মসজিদে ইতেকাফের জন্য জায়গা হিসেবে নির্বাচন করা হয়) ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইবাদতের জন্য নিজেকে স্থির রাখে। এটিকেই মূলত ইতেকাফ বলা হয়ে থাকে।
ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি?
সহি হাদিস অনুসারে ইতেকাফ মূলত হচ্ছে তিন প্রকার।
তিন প্রকার ইতেকাফ হচ্ছেঃ
- সুন্নত ইতেকাফ।
- ওয়াজিব ইতেকাফ।
- নফল ইতেকাফ।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক তিন ধরনের ইতেকাফ সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সুন্নাত ইতেকাফ কি?
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ হচ্ছে সুন্নত ইতেকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করে ইতিকাফ করা সুন্নত।
এই ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়ে থাকে।একটি গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি ওই গ্রাম/ মহল্লার মসজিদে এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ
করোনাভাইরাস টিকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে
ডান চোখ লাফালে কি হয় ইসলাম কি বলে?
ওয়াজিব ইতেকাফ কি?
নজর বা মানতের শর্ত পুরনের জন্য পালন করা ইতেকাফ হচ্ছে ওয়াজিব ইত্তেকাফ।
যেমন ধরেন, কেউ একজন বলল যে, “আমার অমুক কাজ সঠিক ভাবে সমাধান হলে আমি এত দিন ইতেকাফ করব।
অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই কেউ বলল যে, আমি এত দিন অবশ্যই ইতেকাফ করব”।
যত দিন শর্ত করা হয়, ঠিক তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখার শর্ত রয়েছে।
সুন্নাত ইতেকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করাও ওয়াজিব হয়ে যায়।
নফল ইতেকাফ কি?
সাধারণত যেকোনো সময় ইতেকাফ করা হচ্ছে নফল ইতেকাফ। নফল ইতিকাফের কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নির্দিষ্ট করা নেই।
অল্প সময়ের জন্যও নফল ইতেকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতেকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা উচিত।
ইতেকাফের উদ্দেশ্য কি । কি উদ্দেশ্যে ইতেকাফ করা হয়
মূলত ইতেকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ করা।
ইতিকাফের উদ্দেশ্যে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রঃ বলেছেন, “আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা ও স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা হয়ে থাকে। যাতে তার চিন্তা এবং ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে খুব সহজে”।
আরও পড়ুনঃ
ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবার কারণ । কি কি কারণে ইতেকাফ ভেঙ্গে যায়
ইতেকাফ ভেঙ্গে যাওয়ার একাধিক সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে বিশেষ করে ইতেকাফ রত ব্যক্তির ইতেকাফ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ সমূহ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবার একাধিক সুস্পষ্ট কারনঃ
১) প্রস্রাব – পায়খানা এবং মানবীয় শরিয়হ প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ( ইতেকাফের নির্দিষ্ট স্থান) থেকে বের হলে।
২) ফরজ গোসল ছাড়া অতিরিক্ত গরম এবং দুর্গন্ধের কারণে গোসল করলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।
৩) জানাজায় শরীক হলে কিংবা রোগী দেখতে গেলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।
৪) ইতেকাফ রত অবস্থায় শুধু মাত্র ব্রাশ বা মিসওয়াক করার জন্য মসজিদের বাহিরে গেলে ইতেফাক ভেঙ্গে যাবে।
৫) রোজার শর্ত হচ্ছে কেউ অসুস্থতার জন্য রোজা ভাংলে তার ইতেফাক ও ভেঙ্গে যাবে।
৬) প্রচুর অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেও ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।
৭) ইতেকাফের সময়ে অতিরিক্ত কথা কিংবা অতিরিক্ত ঘুমালেও ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।
মহিলাদের ইতেকাফ করার ইসলামী বিধান সমূহ
মহিলাদের ইতেকাফ করার ইসলামী বিধান সমূহ কি কি? আপনি জানেন কি?
পুরুষদের মতো নারীদের জন্যেও ইতেকাফ আদায় করা সুন্নত। তবে সেটি মসজিদে গিয়ে নয় বরং মহিলারা তাদের ঘরে ইতেকাফ করবে।
এর জন্য ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট নামাজের ঘর রয়েছে সেটিকে মহিলারা ইতেকাফের জন্য ব্যবহার করবেন।
তবে, কোনো মহিলার ঘরে যদি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট নামাজের ঘর না থাকে তাহলে নামাজ আদায়ের নির্দিষ্ট স্থানকে কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে সেখানটায় ইতেকাফের ব্যাবস্থা করার বিধান আছে।
এ বিষয়ে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা রাঃ বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন ইন্তেকালের বছর পর্যন্ত। এবং পরবর্তীতে নবিজির স্ত্রিরা ইতেকাফ করেছেন”।
আরও পড়ুনঃ
করোনাভাইরাস টিকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে
ডান চোখ লাফালে কি হয় ইসলাম কি বলে?
ইতেকাফ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ইতেফাক আদায় করার আগে কিংবা মুসলিম হিসেবে ইতেকাফ সম্পর্কিত এই বিশেষ বিষয়গুলি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। চলুন ইতেফাক নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
১) রমজানে মুয়াজ্জিন ব্যতিত ইতেকাফ রত ব্যক্তি মসজিদের বাহিরে গিয়ে আজান দিতে পারবেন।
২)সুন্নত ইতেকাফ আদায় শুরুর পর ভেঙ্গে গেলে রমজান শেষে একদিন রোজা রেখে এক দিন এক রাত ইতেফাক আদায় করে দিতে হবে।
৩) সুন্নত ইতেকাফের শুরুতে কেউ মাগ্রিবের পরে মসজিদে প্রবেশ করলে সুন্নত ইতেফাক হবে না। তখন ইতেফাক নফল ইতেফাক হিসেবে গণ্য হয়ে থাকবে।
৪) শেষ রমজানের দিন সূর্যাস্তের আগে চাঁদ দেখা গেলেও সূর্য ডোবার বা অস্ত যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হতে হবে।
৫) খাবার এগিয়ে দেওয়ার লোক না থাকলে ব্যক্তি নিজেই খাবার আনতে পারবেন। এবং ইতেফাক রত মসজিদে জুমা না থাকলে জুমার জন্য অন্য মসজিদে যেতে পারবেন।
৬) সেচ্ছায় ইতেফাক পালন করতে হবে। কেউকে টাকা দিয়ে বা জোর করে কোনো ভাবেই ইতেফাক আদায় করানো যাবে না।
আরও পড়ুনঃ
স্রোতাদের ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি FAQS
ইতেকাফ তিন প্রকার, যথা সুন্নত ইতেকাফ, ওয়াজিব ইতেকাফ ও নফল ইতেকাফ।
হ্যাঁ, খাবার দিয়ে যাওয়ার কোনো লোক না থাকলে ব্যক্তি নিজে আনতে পরবেন। তবে এই সময়ে অযাচিত কোনো কথা বলা যাবে না।
না, ব্যক্তি সুবিধা অনুযায়ী ১ দিন কিংবা ৩ দিন কিংবা ৫ দিন ও ইতেকাফ করতে পারেন।
মহিলাদের জন্য ইতেকাফের বিধান আলাদা। তারা নিজ ঘরে ইতেকাফ করতে পারবেন বিশেষ ব্যবস্থা অনুযায়ী। এই পোষ্টে বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে। সম্পূর্ণ পোস্টটি পরে জেনে নিন।
ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি সর্বশেষ
আজকের পোষ্টে আমরা ইতেকাফ কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে জেনেছি। জেনেছি ইতেকাফ কাকে বলে।
জেনেছি ইতেকফের মূল লক্ষ্য কি। জেনেছি মহিলাদের ইতেকাফের বিধান সম্পর্কে।
এছাড়াও জেনেছি ইতেকাফ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ সমূহ। জেনেছি ইতেকাফ সম্পর্কিত কিছু বিশেষ বিষয়।
আশা করছি এরপর এই বিষয়ে আর কিছু জানার নেই। এরপরেও কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানান।
এছাড়াও নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আপনারা কিভাবে অনলাইন থেকে ঘরে বসে টাকা আয় করবেন সে সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে।
চোখ রাখুন আমাদের ব্লগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।