সুপ্রিয় পাঠকগণ রোজা ভাঙার কারণ সমূহ সম্পর্কে জানতে আপনারা অনেকেই গুগল সার্চ করে থাকেন। আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে রোজা ভাঙার কারণ সমূহ আপনাদের সাথে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে প্রদত্ত পবিত্র মাস হচ্ছে রমজান মাস। এ মাসে প্রতিটি মুসলিম মানুষের জন্য গুনাহ মাফের মাস এবং ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ মাস। পবিত্র মাহে রমজান বা রোজা হচ্ছে পবিত্র একটি ফরজ ইবাদাত।
মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রতিটি মুসলমান এই ফরজ ইবাদাত প্রতিবছরই পালন করে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলে রোজা ভাঙার কারণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রোজা রাখার পর সতর্ক থাকতে হয় যেন এমন কিছু না হয় যেটার কারণে আপনার রোজা ভেঙে যায়।
সাধারণত প্রত্যেকটি মানুষের জেনে রাখা ভালো প্রাথমিকভাবে তিনটি কারণে আপনার রোজা ভেঙে যেতে পারে।
সেগুলো হচ্ছে- খাওয়া, পান করা এবং স্ত্রী সম্পর্ক।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এই সকল বিষয়গুলো এবং রোজা ভাঙার কারণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করব।
Content Summary
রোজা ভাঙার কারণ কয়টি
মুসলমানদের জন্য ফরজ রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে এই কারণগুলো সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা গুলো আমরা আজকের এই আর্টিকেলে তুলে ধরব।
ইতিমধ্যে আপনাদেরকে জানিয়েছি যে খাওয়া, পান করার কিংবা স্ত্রী সম্পর্ক এর জন্য আপনার রোজা ভেঙে যেতে পারে।
তবে এই সকল কারণগুলো ব্যতীত আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর দ্বারা আপনার পবিত্র রোজাটি ভেঙ্গে যেতে পারে।
তাই সে সকল কারণগুলো জেনে নেওয়া অবশ্যই আপনার জন্য বাধ্যতামূলক।
সংক্ষিপ্ত আকারে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের রোজা ভেঙে যাওয়ার যে কারণগুলো রয়েছে তা জানানোর চেষ্টা করব।
রোজা ভাঙার কারণ কি কি? | রোজা ভাঙার কারণ সমূহ
১. ভুল করে খাওয়া কিংবা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করলে রোজা ভেঙে যায়।
(ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
২. বিড়ি সিগারেট কিংবা ধোয়া জাতীয় যেকোনো মাদকদ্রব্য সেবন করা।
(জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
৩. কাঁচা চাল, আটা দিয়ে তৈরি খামির কিংবা একত্রে অনেক লবণ খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়।
(ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯)
৪. এমন কোন বস্তু খেলে যা সাধারনত খাওয়া হয় না সে ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায়। যেমন- কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি।
(ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
৫. কাদামাটি, কংকর, তুলা সুতো, তৃণলতা, খরকুটো অথবা কাগজ গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে।
(ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
৬. নিজের থুতু যদি হাতে নিয়ে আবার গিলে ফেলা হয় সে ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যাবে।
(ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
৭. ভুলে স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে— আবার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস সম্পর্ক করা।
(ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
৮. যদি কান কিংবা না কে ছিদ্র দিয়ে তরল কোন ঔষধ দেয়া হয় সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যাবে।
(ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭)
৯. যদি কোন ভাবে দাত দিয়ে রক্ত বের হয় এবং সেই রক্ত যদি থুতুর সঙ্গে তো তোর চেয়ে বেশি পরিমাণে হয় এবং কণ্ঠনালীতে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।
(ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭)
১০. মুখের মধ্যে পান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলে এবং এই অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২)
১১. হস্তমৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খণ্ড : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭)
১২. রোজা স্মরণে থাকা অবস্থায় কুলির কিংবা নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কণ্ঠনালীতে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯)
১৩. কাউকে জোর জবরদস্তি করে পানাহার করালে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
১৪. রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সেহরি খেলে রোজা ভেঙে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
১৫. যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা হয় এবং বমি আসার পর তার গিলে ফেলা হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭)
১৬. যদি সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ভুলে ইফতার করে ফেলে সেই ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যাবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)
১৭. যদি কেউ রাত ধারণা করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায়, অতঃপর সুবহে সাদিকের কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সহবাস থেকে বিরত হয়ে যায়। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৪)
১৮. বৃষ্টি বা বরফের টুকরো খাদ্যানালির ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
রোজা ভাঙার কারণ
ইতিমধ্যে আপনাদেরকে রোজা ভাঙার কারণ সমূহ বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
আপনারা অবশ্যই রোজা ভাঙার কারণ সমূহ সঠিকভাবে লক্ষ্য করে তবেই রোজা রাখবেন।
পবিত্র মাহে রমজানের রোজা গুলো আমাদের সকলের জন্যই ফরজ এবাদত।
মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে এই সকল ফরজ ইবাদত গুলো আমাদের অবশ্যই সঠিক ভাবে পালন করা উত্তম।
যে সকল কারণগুলোর কারণে আমাদের রোজা ভঙ্গ হয় সেই কাজগুলো থেকে অবশ্যই আমাদের বিরত থাকতে হবে।
প্রাথমিকভাবে আপনাদের সামনে যে সকল বিষয় আজকের এই আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে সেটি অবশ্যই আপনারা সঠিকভাবে মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
আপনাদের ধারা যেন এই সকল ভুলগুলো না হয় সে বিষয়ে সম্পূর্ণ লক্ষ্য রাখা যাই তো আপনাদের।
মনে রাখবেন মহান আল্লাহ তা’আলা এই পবিত্র মাসকে ঘিরে আমাদের জন্য রহমত নাযিল করেছেন।
রহমতের এই মাসে এক একটি রোজা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহিসালামতে সম্পূর্ণ রোজাগুলো আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুনঃ
রোজা ভাঙার কারণ সমূহ FAQS
মূলত রোজা ভাঙার অনেক কারন রয়েছে। তবে বিশেষ করে কিছু খওয়া, পান করা কিংবা স্ত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায়।
২০২৩ রোজা শুরু হবে আগামী ২৩ মার্চ।( চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)
রোজা থাকা অবস্থায় দুপুরে ঘুমানো নিষেধ নয়। এমনকি ঘুমের ভেতরে স্বপ্নদোষ হলে স্বপ্নদোষের কারণেও রোজা ভাঙে না। তবে স্বপ্নদোষের কারণে গোসল ফরজ হয়। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, রোজা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে; তাদের এ ধারণা সঠিক নয়।
উপসংহার
রোজা ভাঙার কারণ সমূহ আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সাথে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করছি আপনারা আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন রোজা ভাঙার কারণ সমূহ এবং কোন কাজগুলো থেকে আপনাদের বিরত থাকতে হবে।
আমরা সকলেই সঠিকভাবে রোজা রাখার চেষ্টা করবো মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সম্পূর্ণ রোজা রাখার তৌফিক দান করুন আমীন।
আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আপনারা ইসলামিক কিংবা অন্য জ্ঞানমূলক অথবা অনলাইন থেকে আয় সংক্রান্ত আর্টিকেলগুলো পেয়ে যাবেন।
তাই অবশ্যই করে দেখতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট এবং জয়েন করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজে।
আরও পড়ুনঃ
২০২৩ সালের প্রথম রোজা কত তারিখে?
শবে মেরাজের কয়টি রোজা রাখতে হয়?
২০২৩ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে?
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।