প্রিয় পাঠকগণ পিতা মাতার জন্য দোয়া কিভাবে করবেন সে বিষয়ে জানার জন্য আপনারা অনেকে গুগলের মাধ্যমে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলের আমরা আপনাদেরকে পিতা মাতার প্রতি আপনাদের কর্তব্য এবং পিতা মাতার জন্য কিভাবে আপনারা দোয়া করতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।
আমাদের এই পৃথিবীতে কোন মানুষের স্থায়িত্ব নেই। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আমাদের সকলেরই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমনি হয়তো অনেকের পিতা-মাতা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন আবার অনেকেই অসুস্থতায় ভুগছেন।
এ সময়ে আপনারা দুশ্চিন্তা কিংবা নিজেদের মনকে খারাপ না করে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করাটাই সবচেয়ে বেশি উত্তম। বাবা-মা হচ্ছে আপনার আমার সকলের মাথার উপর একটি বট বৃক্ষের মত। তাই প্রতিটি সন্তানের পিতা-মাতার ওপর দায়িত্ব থেকে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা প্রয়োজন।
Content Summary
মা বাবার জন্য দোয়া

মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমের মধ্যে পিতা মাতার জন্য বিশেষ 3 টি দোয়া উল্লেখ করেছেন।
আপনার বাবা-মা জীবিত থাকুক অথবা তারা যদি পরকালে চলে যায় সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য সবসময় কুরআনে বর্ণিত দোয়া গুলো আপনার পড়া জরুরী।
এই সকল দুয়ার মধ্যে আল্লাহতালা উল্লেখ করেছেন নিজেদের জন্য কল্যাণ পাওয়ার ঘোষণা।
চলন মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে কোন দোয়া গুলো উল্লেখ করেছেন তা এখন আমরা পড়বো।
১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
অর্থ : (হে আমাদের) পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
২. رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
৩. رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা।’
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন আর আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)
আরও পড়ুনঃ
বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি কে?
আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে দশটি বাক্য
মা বাবার জন্য আমাদের করণীয় | পিতা মাতার জন্য দোয়া
আপনি আপনার পিতা-মাতার জন্য যত কিছুই করেন না কেন সেটি তাদের ত্যাগ কিংবা তাদের ভালোবাসা থেকে অনেক ছোট হয়ে যাবে।
দুনিয়াতে সবচেয়ে মধুর শব্দ কোনগুলো জানেন?- বাবা এবং মা।
এসব দ্রুত সৌন্দয্যের এমন কোন তুলনা হয় না তেমনি কোনভাবে কোন কিছুর সাথে দুটি জিনিসের তুলনা আপনি করতে পারবেন না।
এর কারণ হচ্ছে পৃথিবীর সকল বাবা মা তার সন্তানের জন্য যে কৃত্রিম ভালোবাসা এবং শ্রম দেন তা পরিমাপ করা একেবারেই অসম্ভব।
বাবা মার প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
দায়িত্ববোধের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে আপনারা পৃথিবীতে এই দুইটি মানুষের সেবা করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা আগে ঘোষণা দিয়েছেন আপনারা যদি বাবা মার জন্য দোয়া করেন তাহলে সেখানে আপনাদের প্রাপ্তি থাকবে।
এই সকল বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের বাবা মার জন্য অনেক কিছুর করণীয় রয়েছে।
বাবা মায়ের জন্য দান সদকা করা

আপনার বাবা-মা বেঁচে থাকলে হয়তো বা তারা সন্তানের কথা ভেবে বেশি বেশি দান-সাদকা করতেন।
আর এছাড়াও তারা হয়তো বা বেঁচে থাকলে আরো বেশি দান সদকা করে যেতে পারতেন।
যেহেতু তারা এটি করতে সক্ষম হয়নি তাই আপনার বাবা মার পক্ষ থেকে আপনি সন্তান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বেশি বেশি দান-সাদকা করা উচিত।
হাদিসের মধ্যে এসেছে-
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল!
হঠাৎ করে আমার মা মারা গেছেন এবং কোনো ওয়াসিয়ত করে যেতে পারেননি।
আমার মনে হয়- তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তাহলে ওয়াসিত করে যেতেন।
এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি তাহলে কি তিনি এর সাওয়াব পাবেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’।’ (মুসলিম)
অর্থাৎ আপনি বাবা মার জন্য সদকায়ে জারিয়া করাটাই উত্তম।
সেটি হতে পারে পানির কূপ খনন করা, দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত, কোরআন শরীফের জন্য মক্তব অথবা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, স্থায়ীভাবে জনকল্যাণমূলক যেকোনো কাজ করা ইত্যাদি।
মা বাবার জন্য রোজা রাখা | পিতা মাতার জন্য দোয়া
আপনার যদি বাবা-মা জীবিত না থেকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি তাদের জন্য রোজা রাখতে পারেন।
যদি আপনার পিতা-মাতার কোনো মানুষের বা কাজা রোজা থাকে তবে তাদের পক্ষ থেকে আপনি সন্তান হিসেবে এ রোজা পালন করার নির্দেশ হাদিসের মধ্যে আছে।
এতে করে তাদের মানতের এবং কাজের রোজা আদায় হয়ে যাবে।
এই সকল বিষয়গুলো ছাড়াও যদি সন্তানরা তাদের উদ্দেশ্য থাকে তাহলে বাবা-মার জন্য রোজা রাখতে পারে।
এমনটি নয় যে আপনি শুধুমাত্র আপনার পিতা-মাতার মৃত্যুর পরে রোজা রাখতে পারবেন।
আপনি আপনার পিতা-মাতার শুভকামনার জন্য চাইলে তাদের জীবিত অবস্থায় রোজা রাখতে পারেন।
হাদীসে উল্লেখ আছে-
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত, আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজার কাজা (যিম্মায়) রেখে যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তবে তার অভিভাবক (রেখে যাওয়া সন্তান বা আপনজন) তার পক্ষ থেকে সওম বা রোজা আদায় করবে।’ (বুখারি)
তবে এক্ষেত্রে অনেক ইসলামিক স্কলার বাবা মায়ের জন্য সন্তানের রোজা রাখার বিষয়ে শুধুমাত্র ফরজ ও ওয়াজিব রোজা রাখার বিষয়টি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
নফল রোজা রাখার ব্যাপারে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ
পিতামাতার জন্য হজ ও ওমরা করা
আপনার বাবা মার পক্ষ থেকে হজ এবং ওমরা পালন করা।
আপনি যদি বাবা-মার উদ্দেশ্যে হওয়া যেমন আমরা পালন করেন তাহলে সেটি আদায় হয়ে যাবে।
হাদিসের মধ্যে এসেছে-
হজরত ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, জুহাইনা গোত্রের এক নারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমার মা হজের মান্নত করেছিলেন; তবে তিনি হজ করার আগেই ইন্তেকাল করেছেন।
আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তার পক্ষ থেকে তুমি হজ আদায় কর। তুমি এ ব্যাপারে কি মনে কর যে, ‘যদি তোমার মার উপর কোনো ঋণ থাকত, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না?
সুতরাং আল্লাহর হক (হজের মান্নত) আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই সবচেয়ে বেশি আদায়যোগ্য।’ (বুখারি)
তবে বাবা-মার পক্ষ থেকে আপনি যদি হওয়া যায় এবং ওমরা পালন করতে চান তাহলে আগে নিজের হজ বা ওমরা আদায় করে নিতে হবে।
যদি আপনার নিজের হজ ও ওমরা আদায় করা হয়ে থাকে তাহলে আপনি আপনার বাবা মার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরা পালন করতে পারেন।
মা বাবার জন্য কুরবানী
আপনি যদি আপনার মেয়েতো বাবা-মায়ের জন্য সওয়াব এর উদ্দেশ্যে বাবা মার পক্ষ থেকে কোরবানি করতে ইচ্ছুক হন তাহলে অবশ্যই আপনি সেটি পারবেন।
তাতে তারা সওয়াবের অধিকারী হবে। হাদিসের মধ্যে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানি করার জন্য দুই শিং বিশিষ্ট দুম্বা আনতে আদেশ দেন।
যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (সেটির পায়ের গোড়া কালো ছিল)। কালোর মধ্যে শুইতো (পেটের নিম্নাংশ কালো ছিল)।
আর কালোর মধ্য দিয়ে দেখতো (চোখের চারদিকে কালো ছিল)।
সেটি আনা হলে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘ছুরিটি নিয়ে এসো। তারপর বললেন, ওটা পাথরে ধার দাও।
আমি (হজরত আয়েশা) ধার দিলাম। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন।
অতঃপর সেটা জবেহ করলেন এবং বললেন-
بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ
অর্থ : আল্লাহর নামে (জবাই করছি)। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, মুহাম্মাদ পরিবার ও তার উম্মাতের পক্ষ থেকে এটা কবুল করে নাও। এরপর এটা কুরবানি করেন।’ (মুসলিম)
আরও পড়ুনঃ
পিতা মাতার জন্য দোয়া FAQS
আপনি আপনার পিতা মাতার জন্য যদি দোয়া করতে চান তাহলে আপনাকে বেশি বেশি এই দোয়া টি পড়তে হবে।
১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
আরও ২ টি দোয়া আমরা আর্টিকেলে উল্লেখ করেছি।
আমরা আমাদের মা বাবার জন্য বেশি বেশি দান সদকা করতে পারি, এবং আরও অনেক পূর্ণের কাজ করতে পারি। এইসকল কাগজ গুলো আমাদের বাবা মায়ের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠকগণ আমরা আজকেরে আর্টিকেলে পিতা মাতার জন্য দোয়া কিভাবে করতে হয় এবং পিতা-মাতার জন্য আমাদের করণীয় সম্পর্কে সামান্য তথা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের এসকল বিষয়গুলোর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
সর্বপ্রথম একজন সন্তান হিসেবে ব্যবহার প্রতি এই সকল দায়িত্ব গুলো পালন করার চেষ্টা করব আমরা সকলেই।
এর পরবর্তী সময়ে এমন সন্তান আমরা তৈরী করব যেন আমাদের মৃত্যুর পর তারা আমাদের জন্য এসকল আমলগুলো করে।
আরো অনেক আমার রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের পিতা মাতার জন্য দোয়া করতে পারি।
এই সকল বিষয়গুলোর ওপর আমাদের যথার্থ জ্ঞান অর্জন করার আল্লাহ তৌফিক দান করুক। আমিন।
আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লেগেছে এবং আপনার আজকেরে আর্টিকেল থেকে পিতামাতার জন্য আমাদের কর্তব্য কিংবা পিতা-মাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আপনারা অবশ্যই কোনো প্রশ্ন বা মতামত যদি থাকে তাহলেও কমেন্টের মাধ্যমে জানান। আমাদের এই ওয়েবসাইটে সকল বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
আপনারা চাইলে সে সকল আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন।
এছাড়াও আমাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে অনলাইন থেকে টাকা আয় বিষয়ক আর্টিকেল।
আমাদের ওয়েব সাইটের সকল আপডেট গুলো পেতে চাইলে ফেসবুক পেইজে জয়েন করুন।
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।