গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না একজন গর্ভবতী নারীর জন্য জানা অত্যন্ত জরুরী। একজন মা জানে গর্ভাবস্থায় কত কষ্ট সহ্য করতে হয়। মেনে চলতে হয় হাজারো বিধি নিষেধ।
একজন যোগ্য মা হিসেবে অবশ্যই জানা উচিত গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সতর্কতাই পারে একজন সুস্থ সবল এবং স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে।
গর্ভাবস্থায় শিশু গর্ভে থাকার ফলে গর্ভবতী নারীর খাবারের দিক থেকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়।
এর কারণ গর্ভে থাকা শিশুর স্বাস্থ্য এবং সু স্বাস্থ্যের অধিকারি হয় জন্ম গ্রহণ করা।
একজন নারী স্বাভাবিক সময়ে যেসব খাবার ইচ্ছা করলেই খেতে পারেন, সেসব খাবার চাইলেই গর্ভাবস্থায় পারে না।
আজকে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এবং কি কি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। শুধু যে সবজিই তা নয়।
বরং সব ধরনের খাবারের মধ্যে আরও অনেক খাবার খাওয়া যাবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে বিস্তারিত।
গর্ভাবস্থায় কেন খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে

একজন নারীর জীবনের অন্যতম একটি সময় হচ্ছে গর্ভাবস্থা। এই সময়ে নারীর শারীরিক মানসিক পরিবর্তন ঘটে থাকে।
শুধু তাই ই নয়।
বরং, আপনাকে অবশ্যই আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্যে হলেও গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার গ্রহণ আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করে।
নিশ্চিত করে সন্তানের জন্মের পরবর্তী জীবনে সুস্থ সাভাকি জীবন।
যেখানে খাবার গ্রহনে একটু ভুল বা অসতর্কতার কারণে আপনার এবং অনাগত সন্তানের অনাগত ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পরতে পারে।
এজন্য গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার গ্রহণ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শুধু সবজি ই না।
সব ধরনের খাবারের মধ্যে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না তা জানা অত্যন্ত জরুরি।
একেক করে জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি এবং অন্যান্য খাবার খাওয়া যাবে না তা জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না?
সর্বপ্রথম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শতভাগ স্বাস্থ্যকর এবং মানসম্পন্ন খাবার গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে কিছু খাবার খাওয়া থেকে এড়িয়ে যেতে হবে।
কারণ এই ধরনের খাদ্যগুলো অনাগত সন্তান এবং গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যেও মারাত্মক ক্ষতিকর।
এজন্য গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তার একটি তালিকা করে নেয়া ভালো।
চলুন গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি এবং কি কি খাবার খাওয়া যাবে না তা দেখে নেওয়া যাক।
ডাক্তারদের পরীক্ষিত এবং প্রমানিত তথ্য অনুযায়ী এই সকল খাবার গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
১) না ধোয়া ফল এবং সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় নারী এবং সন্তানের জন্য ফল এবং সবজি অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান। না ধোয়া ফল এবং সবজিগুলির খোসাগুলিতে শুধু ক্ষতিকারক কীটনাশক ও হার্বিসাইডই থাকতে পারে না, সেগুলো টক্সোপ্লাজমা গন্ডি এবং লিস্টেরিয়ার মতো মারাত্মক প্যাথোজেনদেরও বাসস্থান হয়। স্প্রাউট, লেটুস এবং বাঁধাকপির মতো না ধোয়া কাঁচা শাকসবজি বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে।
২) যেসব ফল খাওয়া যাবে না
পেঁপে, আনারস এবং আঙ্গুর গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না। অপক্ক পেঁপে বিশেষ ভাবে বেশি সমস্যা করে। এর কারণ অপক্ক পেপেতে নির্দিষ্ট যৌন রয়েছে যা নারীদের জরায়ুর সংকোচনকে ট্রিগার করে দেয়।
এছাড়া ফ্রিজে দীর্ঘদিন ফলমূল রেখে কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। এবং পাতাওয়ালা সবজি বেশি বেশি করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রান্না করবেন।
৩) কাঁচা অথবা অল্প সিদ্ধ ডিম খাওয়া যাবে না
ডিম খেলে অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। হালকা সিদ্ধ বা হালকা রান্না ডিম খেয় থাকেন যা গর্ভাবস্থায় ত্যাগ করতে হবে।
৪) রেস্টুরেন্টের খাদ্য বা দোকানের কেনা সালাদ খাওয়া যাবে না
গর্ভবতী মহিলাদের রেস্তোরাঁতে খাবার অর্ডার করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ বাহিরে খাবার তৈরির উপাদানগুলি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
রেস্টুরেন্টগুলিতে বা এমনকি দোকানে পাওয়া স্যালাড শতভাগ এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য বাড়িতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে সালাদ এবং সকল খাবার তৈরি করে খেতে হবে।
৫) কোনো ধরনের ফলের রস খাওয়া যাবে না
তাজা ফলের রস গর্ভাবস্থার সময়ে একটি ভালো খাবার বটে। কিন্তু কাঁচা ফল এবং সবজি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা দূষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতভাগ।
তাই আপনি বাড়িতে তৈরি তাজা রস দিয়ে আপনার তৃষ্ণা মেটান যাতে নিশ্চিত হতে পারেন যে রসটি তাজা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে বানানো।
এছাড়া প্যাকেট করা রসগুলি ক্রয় করার সময়, পেস্টুরাইজ করা এবং রেফ্রিজারেট করা রসগুলি নির্বাচন করুন।
গর্ভবতী নারীর ইমিউন সিস্টেম গর্ভাবস্থায় অনেকটা দুর্বল থাকে। এবং আপনি প্যাস্টুরাইজ না করা রসে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারেন।
৬) ভেষজ সম্পূরক এবং ভেষজ চা
গর্ভাবস্থায় ভেষজ টনিক এবং চা গ্রহণ করা শুরু করতে বলবে অনেকে। তবে এটি ভাল করার চেয়ে আপনাকে ক্ষতি করবে বেশি।
তাই চা বিশেষ করে অতিরক্ত কড়া বা অনেক তিতা চা ভুলেও খাওয়া যাবে না।কারণ ডাক্তারি মতে চা একজন নারীর গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকে।
৭) অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাদ্য খাওয়া যাবে না
বেশিরভাগ নারী তার গর্ভাবস্থায় আইসক্রিম এবং চকলেট খেতে চায় অনেক বেশি।
তবে, এগুলিতে থাকা উচ্চ চিনির মাত্রা আপনার রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা আপনার পেটের ভ্রূণকে ক্ষতি করতে পারে।
প্রতিদিন কত পরিমানে চিনি খাচ্ছেন তা পরীক্ষা করুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিনি এড়াতে আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা অব্বহত রাখুন। আর আইস্ক্রিম খেতে পারবেন তবে মাঝে মাঝে।
আরও পড়ুনঃ
৮) মশলাযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না
গর্ভবতী মায়েদের মশলাযুক্ত খাবার সবচেয়ে বেশি এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভাবস্থার সময়, অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও বুকজ্বালার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
এবং মশলাযুক্ত খাবার খেলে বুক বুকজ্বালা বাড়িয়ে বাড়তেই থাকবে। রান্নায় মশলা কম পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।
কখনো যদি অতিরিক্ত মশ্লা জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিন এবং নিশ্চিত করুন বুকজ্বালা কমছে।
৯) অ্যালকোহল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
অ্যালকোহল জাতীয় খাবার শুধু গর্ভবতী মায়েদের জন্যই ক্ষতিকর নয়। এটি সব শ্রেণীর মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তবে বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া আবেই না। আর অ্যালকোহল যুক্ত কোনো ধরনের খাবার বিশেষ করে পনীর জাতীয় কিছু খাওয়ায় যাবে না।
১০) গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তার তালিকা

এতক্ষণ আমরা বেশ কিছু খাবার সম্পর্কে জানলাম যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না। এবার একটি তালিকা দেখে নেই।
তালিকায় থাকা খাবারই ম্যলত গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে গর্ভবতী নারীকে বিরত থাকতে হবে।
ক) কাঁচা ডিম খাওয়া যাবে না।
খ) অর্ধ সিদ্ধ ডিম গোশত / মাংস খাওয়া যাবে না।
গ) অপাস্তরিত বা কাঁচা দুধ খাওয়া যাবে না।
ঘ) কলিজা এবং কলিজা দিয়ে তৈরি কোনো খাবার খাওয়া যাবে না।
ঙ) ক্যাফেইন জাতীয় কোনো খাবার খাওয়া যাবে না।
চ) সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে না।
ছ) কাঁচা বা আধা পাকা পেপে খাওয়া যাবে না।
জ) আঙ্গুর এবং আনারস ফল খাওয়া যাবে না।
ঝ) স্প্রাউট, লেটুস এবং বাঁধাকপির মতো না ধোয়া কাঁচা শাকসবজি খাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ
গগর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না FAQS
খাবারের মান এবং খাবার তৈরির উপর হচ্ছে মূলত নির্ভর করে কি খাওয়া যাবে এবং কি খাবার খাওয়া যাবে না। এছাড়া কিছু খাবার খাওয়া যাবে না যেমন হচ্ছে স্প্রাউট, লেটুস এবং বাঁধাকপি।
না, গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে সচারচার যেসব মাছ মানুষ খায় না সেগুলো খাওয়াই যাবে না।
না, কোনো ভাবেই না। অ্যালকোহল একটি নেশা জাতীয় দ্রব্ব। এটি খেলে গরভের শিশুর মানসিক বিকাশে বাধা পায়। কোনোভাবেই গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না।
গর্ভাবস্থার খাবার খাওয়া নিয়ে সর্বশেষ
আজকে আমরা জেনেছি গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এবং জেনেছি কোন কোন খাবার গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না।
এছাড়াও আমরা আরও জেনেছি কোন খাবার খাওয়ার আগে কোন কোন বিষয়ে সতর্ক হতে হবে গর্ভাবস্থায়।
আশা করছি আজকের সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়ার পরে এই বিষয়ে আর কিছু জানার বাকি থাকবে না। এরপরে কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানান।
বিভিন্ন বিষয়ে ব্লগ পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ব্লগের ফেসবুক পেজে।
আরও পড়ুনঃ