বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব রয়েছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনি জানেন কি। আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব সম্পর্কে জানবো।
পড়ন্ত বা স্রোত রয়েছে এমন নদীর জলের চাপ কে ব্যবহার জল বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি গুলোর মধ্যে জলবিদ্যুৎ অন্যতম।
একবার যদি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হয় খুব কম শক্তির মাধ্যমে এটি চালানো সম্ভব।
জলবিদ্যুৎ এর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনই পরিবেশের ওপর এর প্রভাবও রয়েছে। আজকে আমরা দুটি দিকই আপনাদের সামনে তুলে ধরব। জলবিদ্যুৎ জীবাশ্ম জ্বালানি যেমনঃ তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খুব কম পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে।
জলবিদ্যুৎ পৃথিবীর মোট বিদ্যুৎ এর ২০% এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ এর ৮৮%।
Content Summary
- 1 পরিবেশের ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব ব্যাখ্যা কর
- 1.1 বাঁধ ধ্বসে পড়া
- 1.2 ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ে
- 1.3 বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র – কাপ্তাই বাঁধের সুবিধা ও অসুবিধা
- 1.4 জলবিদ্যুৎ তৈরিতে বাঁধ নির্মাণের প্রভাব
- 1.5 জলবিদ্যুৎ এর অর্থনৈতিক সুবিধা | বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব
- 1.6 সর্বোচ্চ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ সমূহ
- 1.7 ২০০৯ সালের সর্বোচ্চ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ১০টি দেশঃ
- 1.8 বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব FAQS
- 1.9 উপসংহার
- 1.10 Share this:
পরিবেশের ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব ব্যাখ্যা কর
মূলত পরিবেশের ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব নানান রকম হতে পারে। তবে এর প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে-
- বাঁধ ধ্বসে পড়া
- ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ে
আরও পড়ুনঃ
What is email marketing Bangla
বাঁধ ধ্বসে পড়া
বাঁধ ধ্বসে পড়া মানব সৃষ্ট সবচেয়ে বড় দুর্যোগ গুলোর মধ্যে একটি। এমনকি যেসকল বাঁধগুলো ভালো নকশা দ্বারা প্রস্তুতকৃত সেসকল বাঁধও শতভাগ নিরাপদ নয়।
যেমন: বাঙ্কিয়াও বাঁধ ধ্বসে পড়ার কারণে দক্ষিণ চীনে তাৎক্ষণিকভাবে ২৬,০০০ মানুষ মারা যায়। লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছিল।
ভুল জায়গায় বাঁধ স্থাপনের কারণে বাঁধ অনেক ভয়ানক দুর্যোগ ও বয়ে আনতে পারে। যেমনটি ঘটেছিল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভেয়ন্ট বাঁধ এর কারণে ইতালিতে ২,০০০ মানুষ মারা যায়।
এছাড়াও মাছের আবাসস্থলের এবং খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ঘটে যায়। মাছের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, বাধ পূর্ববর্তী বিস্তীর্ন অঞ্চল প্লাবিত হয় ও বাধ পরবর্তী অঞ্চলে তীব্র খরা দেখা দিতে পারে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ে
একটি জলবিদ্যুৎ একটি দেশের যেমন সুফল রয়েছে তেমনি নানা অসুবিধার কারণ হয়ে থাকে। ভূমিকম্প খুবই ভয়ঙ্কর একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
বিশেষ করে আমরা যদি জাপানের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো প্রতিবছরই লাখ লাখ মানুষ ভূমিকম্প এর কারণে মারা যাচ্ছে।
কিছুদিন আগেই আমাদের এশিয়া মহাদেশে আফগানিস্থানে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে প্রায় ১২৩০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।
এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে হতে পারে।
বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র – কাপ্তাই বাঁধের সুবিধা ও অসুবিধা
১৯০৬ সালে সর্ব প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল।
আমাদের দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হওয়ায় এদেশে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বারবার।
এ দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে কাপ্তাইয়ে অবস্থিত।
বাংলাদেশের সে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কোন নদীর উপর বাঁধ দিয়েরাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কাপ্তাই বাঁধ তৈরি করা হয়।
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ৪৬ মেগাওয়াট করে দুইটি ইউনিট নিয়ে কাপ্তাইয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।
পরবর্তীতে সেখানে আরও তিনটি ইউনিট স্থাপন করা হয়।
সে তিনটি ইউনিট ছিল ৫০ মেগাওয়াট করে।
এর মধ্যে তিনটি ইউনিট ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে, এবং ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট চালু করা হয় ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে।
যে প্রথম তিনটি ইউনিট রয়েছে সেই তিনটি ইউনিট বসানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিতে।
পরবর্তী দুটি স্থাপন করা হয়েছিল জাপানের টোকিও ইলেকট্রনিকের পাওয়ার সার্ভিসের কোম্পানির মাধ্যমে।
যখন এগুলো স্থাপন করা হয়েছিল অর্থাৎ জাপান যে দুটি স্থাপন করেছিল তখন তারা আরও দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য আর্থিক সুবিধা রেখে দেয়।
জাপানি এই প্রতিষ্ঠানটি ধারা ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সেখানে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব কি-না সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তারা জানায় বর্তমানে অবকাঠামো এবং এই পানি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো দুইটি ইউনিট বসানো সম্ভব হবে। তাতে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরো কম হয়ে আসবে।
বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎউৎপাদন খরচ প্রায় ২০ পয়সা।
আরও পড়ুনঃ
ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করার নিয়ম
জলবিদ্যুৎ তৈরিতে বাঁধ নির্মাণের প্রভাব
একটি জলবিদ্যুৎ তৈরিতে যে বাড়তি নির্মাণ করা হয়েছিলো সে বাঁধটি নির্মাণের ফলে ৬৫৫ বর্গকিলোমিটার (২৫৩ বর্গমাইল) অঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়।
কাপ্তাই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবার নির্মাণের ফলে তারা তাদের বাড়িঘর এবং চাষযোগ্য জমি হারিয়েছিলেন।
প্রায় ১৮,০০০ টি পরিবার এবং ১,০০,০০০ জন উপজাতিকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়।
৪০ হাজারেরও অধিক চাকমা আদিবাসী সম্প্রদায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্থানান্তর হয়েছিল। কেননা বাংলাদেশে থাকার জন্য সেরকম কোন জায়গা ছিল না।
জমি অধিগ্রহণের ফলে ওই এলাকায় সৃষ্ট সংঘর্ষের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
এছাড়াও বাঁধ নির্মাণ জনিত কারণে জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছিল। বর্ণ প্রাণী গুলো এবং তাদের বসবাস উপযোগী বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা কোনটি
জলবিদ্যুৎ এর অর্থনৈতিক সুবিধা | বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব
বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি খুব স্বল্প এবং কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অনেক দীর্ঘ স্থায়ী হয়ে থাকে।
এখনো কিছু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যা ৫০ থেকে ১০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এবং এখন পর্যন্ত চলে আসছে।
যেহেতু এটা স্বয়ংক্রিয় তাই শ্রমিক খরচ কম হয়।
যেমনঃ হিসাব করে দেখা গেছে থ্রি জর্জেস বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করে পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে এর নির্মাণ ব্যয় তুলতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোচ্চ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ সমূহ
ব্রাজিল, কানাডা, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং ভেনুজুলিয়া হলো একমাত্র দেশ যে দেশগুলোতে পানি বিদ্যুৎ শক্তির প্রধান উৎস।
প্যারাগুয়ে এমন একটি দেশ যেখানে শুধুমাত্র শক্তির ১০০% জলবিদ্যুৎ নয়, বরং বলা যেতে পারে তাদের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯০% ই অন্যান্য দেশের জন্য রপ্তানি করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা এ রপ্তানি করা হয়।
নরওয়ের মোট বিদ্যুতের মোট ৯৮-৯৯% আসে পানি বিদ্যুৎ হতে।
২০০৯ সালের সর্বোচ্চ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ১০টি দেশঃ
দেশ | বার্ষিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন(TWh) | উৎপাদন ক্ষমতা(GW) | ক্যাপাসিটি ফ্যাক্টর | দেশের মোট বিদ্যুতের শতকরা অংশ |
চীন | ৫৮৫.২ | ১৯৬.৭৯ | ০.৩৭ | ২২.২৫ |
কানাডা | ৩৬৯.৫ | ৮৮.৯৭৪ | ০.৫৯ | ৬১.১২ |
ব্রাজিল | ৩৬৩.৮ | ৬৯.০৮০ | ০.৫৬ | ৮৫.৫৬ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ২৫০.৬ | ৭৯.৫১১ | ০.৪২ | ৫.৭৪ |
রাশিয়া | ১৬৭.০ | ৪৫.০০০ | ০.৪২ | ১৭.৬৪ |
নরওয়ে | ১৪০.৫ | ২৭.৫২৮ | ০.৪৯ | ৯৮.২৫ |
ভারত | ১১৫.৬ | ৩৩.৬০০ | ০.৪৩ | ১৫.৮০ |
ভেনেজুয়েলা | ৮৬.৮ | _ | _ | ৬৭.১৭ |
জাপান | ৬৯.২ | ২৭.২২৯ | ০.৩৭ | ৭.২১ |
সুইডেন | ৬৫.৫ | ১৬.২০৯ | ০.৪৬ | ৪৪.৩৪ |
আরও পড়ুনঃ
ভারতে প্রথম মুদ্রা প্রবর্তন করেন কে?
প্রত্যাশিত আয় তত্ত্ব কে প্রবর্তন করেন । প্রত্যাশিত আয় তত্ত্ব কি
বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব FAQS
পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ এর অনেক প্রভাব রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হল ভূমিকম্প এবং বাঁধ ধ্বস।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক সুবিধা রয়েছে। যা একটি দেশ এর জন্য সুফল বয়ে আনে। কম খরচে বিদ্যুৎ তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটি।
উপসংহার
আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব সম্পর্কে আপনাদের সম্পুন্ন ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন অসুবিধা রয়েছে।
কিন্তু এটি আমাদের দেশের জন্য খুবই সুফল বয়ে আনছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ এর কারণে অনেক উপকৃত হচ্ছি।
আশা করছি আজকের এই পোস্ট টি পড়ে আপনাদের বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
তবুও যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
আর আপনারা নিত্যনতুন শিক্ষামূলক এবং অনলাইনে কিভাবে টাকা ইনকাম করবেন সে সকল বিষয়ে যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
সেই সাথে আমাদের ওয়েবসাইট সম্পর্কিত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করুন।
ধন্যবাদ।
ডিজিটাল টাচ ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন ।
ডিজিটাল টাচ সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ এই লিংকে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ www.digitaltuch.com সাইট ।